গাজীপুরে করোনা আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ চালু হয়নি চিকিৎসা সেবা।



গাজীপুর গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৯২ জন করোনাভাইরাস বা কোভিড–১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি গাজীপুরে। এখানে আক্রান্তের হার ২০ শতাংশে পৌছেছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী থেকে ‘করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। রাজধানী ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের পর করোনাভাইরাস বা কোভিড–১৯ আক্রান্ত রোগী ব্যাপক হারে বাড়ছে গাজীপুরে। গতকাল পর্যন্ত এই জেলায় মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ২৭৯। মারা গেছেন দুই জন।
জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি করোণা হাসপাতাল হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে। এখনও প্রস্তুতিই শেষ হয়নি। রোগী রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে একটি রিসোর্টসহ তিনটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১৬৩ জনের সেম্পল কালেকশন করা হয়েছে। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬ জন। এ পর‌্যন্ত সেম্পল কালেকশন করা হয়েছে এক হাজার ৩৮৭ জনের। জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৯ জন। এ পর‌্যন্ত মারা গেছেন দুই জন। এর মধ্যে গাজীপুর সদর ও মহনগরীতে ৫৭ জন, কালীগঞ্জে ৩১ জন, কালিয়াকৈরে ৯, কাপাসিয়ায় ৮ ও শ্রীপুরে ১ জন। রাজধানীর সবচেয়ে সন্নিকটে থাকা এই জেলাকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ইতিমধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সর্বশেষ গত রোববার পর্য়ন্ত গাজীপুরে সংক্রমন ছিলো ১৭৩ জন। গতকাল সোমবার ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৯ জনে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে যে ৪৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২০ শতাংশই গাজীপুরের। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ দশ চিকিৎসক, ২৫ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড–১৯ আক্রান্ত। ১১ এপ্রিল এই জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন রকম শিল্পকারখানার কারণে নানা জেলার মানুষের বসবাস গাজীপুরে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত এই জেলার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ২১ লাখ। তবে বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে এখন জনসংখ্যা ৪০ লাখের বেশি হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে এমনিতে চিকিৎসাব্যবস্থা খুব অপ্রতুল। এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গাজীপুরে রোগীদের চিকিৎসার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়। এছাড়া ইতালী ফেরতদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য গাজীপুরের পূবাইল এলাকায় মেঘডুবী ২০ শয্যা মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টেন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ওই ঘোষনা দেওয়ার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল সোমবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. তপন কান্তি সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার হলেও আমাদের যে জনবল আছে তাতে এখন সর্বোচ্চ ১০০ করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এর বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে গেলে জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। গাজীপুরে শনাক্ত হওয়া মোট রোগী ২৭৯ জন। মারা গেছেন দুই জন।
এই মুহুর্তে এখানে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। করোনা আক্রান্ত রোগীদের কিছু আছেন হোম আইসোলেশনে আর যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদের ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর তুলনায় এই জেলায় চিকিৎসা–সুবিধা এখন একেবারেই নেই। শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশির ভাগকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বাড়িতে বা ঢাকায় রেফার্ড করা হচ্ছে। গাজীপুর হাসপাতলটি করোনা চিকিৎসার জন্য চালু হলে রোগীদের হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হবে। চিকিৎসাও ভালো হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত সব রোগীর জন্য হাসপাতালে থাকাটা জরুরী নয়। তাদের সমস্যাটা কম তাদের জন্য হোম আইসোলেশনই ভালো। তবে একটি রুমের মধ্যেই তাকে থাকতে হবে। তাদের আলাদা রুম নেই তাদের বাসা থাকা যাবে না। তাতে অন্যরা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদের ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ আমার কার‌্যালয়ের কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। বর্তমানে করোনা রোগীদের জন্য গাজীপুরে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কয়েকদিনের মধ্যেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্থুত হচ্ছে। সংক্রামন যদি বাড়থে থাকে তবে গাজীপুর মহানগরীর মেঘডুবি ২০ শয্যা বিশিষ্টি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, শ্রীপুরের বরমী মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, পূবাইল এলাকার একটি ট্রেনিং সেন্টার ও গ্রীনটেক রিসোর্টে করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র করা হবে।’ এদিকে জেলায় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাসেবাও ভালো পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ করেন রোগীদের স্বজনরা। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) গাজীপুর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়লেও এই জেলায় সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেই।
প্রতিদিনি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই দ্রুত জেলা করোনা চিকিৎসার কাযক্রম চালু করা জরুরী। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ মানুষকে ঘরে রাখতে জেলায় লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। কোন কারণ ছাড়া মানুষ ঘুরাঘুরি করলে জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। এদিকে প্রতিদিন করোনার সংক্রামন বাড়ছে। গাজীপুর করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুতই শুরু হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.