নাটকঃ চিঠি । লেখকঃ ( মুনীর চৌধুরী ) রিভিও
বাংলাদেশের সাহিত্যের উৎকর্ষসাধনে মুনীর চৌধুরী সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম শিল্পসফল ও কালোত্তীর্ণ। মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১) শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাস। অসাধারণ এবং অসম্ভব রকমের এক প্রতিভার নাম মুনীর চৌধুরী। তাঁর প্রতিষ্ঠার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল শিক্ষকের আদর্শবাদিতা, নিষ্ঠা, সফল নাট্যপ্রতিভা ও সমাজ-চেতনার সমৃদ্ধি। জীবনের ছেচল্লিশ অধ্যায়ে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে মুনীর চৌধুরী নিহত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত শহীদদের মধ্যে অন্যতম মুনীর চৌধুরী। তাঁর চেতনায় সর্বদা লালিত হয়েছে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘটনাপ্রবাহসহ বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও সংগ্রামী চেতনা। তিনি ব্যক্তি জীবনে অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন, ছিলেন মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল।
আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী পূর্ণাঙ্গ নাম মুনীর চৌধুরী। মুনীর চৌধুরীর জন্ম মানিকগঞ্জে। বাবা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী (১৮৯২-১৯৭০)। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী।
মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’ তিন অঙ্ক বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক। মুনীর চৌধুরী কমেডিকে জীবনাচারণে স্থান দিয়েছিলেন। তারই সঠিক পরিচয় ‘চিঠি’ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে। নাটকটিতে বিশুদ্ধ হাস্যরস, ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। দৃষ্টিভঙ্গির নিজস্বতা ‘চিঠি’ নাটকে বিচ্ছুরিত হয়েছে। কবীর চৌধুরীর মতে, “‘চিঠি’ বাঙলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রহসন”। (রামেন্দু মজুমদার সম্পাদিত থিয়েটার, পৃষ্ঠা. ১৪৬) ‘চিঠি’ নাটকের পটভূমি ১৯৬২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নাটকের চরিত্র হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, প্রক্টর ও পুলিশ অফিসার প্রমুখ। সমগ্র নাটকটি কৌতুকাবরণে ঢাকা। নাটকটিতে স্থান পেয়েছে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তারিখ নির্ধারণ এবং তারিখ পিছিয়ে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই আন্দোলনের পেছনে অভিন্ন মতের ছাত্রদের প্রতি বাধাদান, মেধাবী ছাত্রের খাতা হারানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রণয়ঘটিত দ্ব›দ্ব-সংঘাত এবং প্রক্টরের পালনীয় কর্তব্যসহ হঠাৎই পুলিশ অফিসারের উপস্থিতি ‘চিঠি’ নাটকে প্রহসনের পরিচয় দিয়েছে।
এছাড়া নাটকটিতে যুক্ত হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের প্রথম স্থান দখলের লড়াই, তাদের ভেতরের পারস্পরিক ঈর্ষা, অপছন্দের এবং প্রতিপক্ষের ছাত্রদের প্রতি পুলিশি হয়রানির মতো নিচতা ইত্যাদি। এ সব কিছুর ভেতরের নাট্যকারের নৈপুণ্যের চমৎকারিত্বও প্রকাশিত হয়েছে। যা নাট্যকারের দক্ষতা, রোমান্টিকতা বর্জিত ‘সোহরাব’ ‘চিঠি’ নাটকের নায়ক, খালেদ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া প্রেমিক, রমিজ আদর্শ বর্জিত ছাত্রনেতা, সচেতনতার বলীয়ান এই নাটকের নায়িকা মিস মীনা মিনহাজ, সদা চঞ্চল প্রকৃতির চরিত্র রুমা, পালনীয় কর্তব্যের প্রতি দায়িত্ব সচেতন প্রক্টর হাসান ও পুলিশ অফিসার আসাদ। সকলেই এই নাটকে নিজস্ব গুণে উচ্ছল এবং উজ্জ্বল। এই সব কিছুর পাশাপাশি সংলাপ নির্মাণের কৌশল নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর দক্ষতাকে দিয়েছে সমৃদ্ধি। এ কারণেই ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘-এ নাটকে প্রহসনের মেলা বসিয়েছে’। (পূর্বোক্ত-১৪৮)
এছাড়া নাটকটিতে যুক্ত হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের প্রথম স্থান দখলের লড়াই, তাদের ভেতরের পারস্পরিক ঈর্ষা, অপছন্দের এবং প্রতিপক্ষের ছাত্রদের প্রতি পুলিশি হয়রানির মতো নিচতা ইত্যাদি। এ সব কিছুর ভেতরের নাট্যকারের নৈপুণ্যের চমৎকারিত্বও প্রকাশিত হয়েছে। যা নাট্যকারের দক্ষতা, রোমান্টিকতা বর্জিত ‘সোহরাব’ ‘চিঠি’ নাটকের নায়ক, খালেদ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া প্রেমিক, রমিজ আদর্শ বর্জিত ছাত্রনেতা, সচেতনতার বলীয়ান এই নাটকের নায়িকা মিস মীনা মিনহাজ, সদা চঞ্চল প্রকৃতির চরিত্র রুমা, পালনীয় কর্তব্যের প্রতি দায়িত্ব সচেতন প্রক্টর হাসান ও পুলিশ অফিসার আসাদ। সকলেই এই নাটকে নিজস্ব গুণে উচ্ছল এবং উজ্জ্বল। এই সব কিছুর পাশাপাশি সংলাপ নির্মাণের কৌশল নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর দক্ষতাকে দিয়েছে সমৃদ্ধি। এ কারণেই ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘-এ নাটকে প্রহসনের মেলা বসিয়েছে’। (পূর্বোক্ত-১৪৮)
দুই.
‘চিঠি’ নাটকটি মূলত ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। এই নাটকের কাহিনীতে দেখতে পাওয়া যায় সোহরাব, খালেদ ও তারেক তিন বন্ধু। সোহরাব মেধাবী ছাত্র, তার টিউটোরিয়াল খাতা মিস মীনা মিনহাজ তারেকের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সমস্যাটা তৈরি হয় খাতাটির মধ্যে ‘তাহমিনা’ সম্বোধন করে একটি চিটি লেখা ছিল, যার মধ্যে প্রেমের ব্যাকুল আবেদন ছিল ‘রুস্তম’ ছদ্মনামে তারেকের। চিঠির লেখনী ছিল ক্রীড়ামোদি খালেদের। ফলে খাতাটি মিস মীনা মিনহাজের কাছে যাওয়ার পর থেকেই তিনবন্ধু অস্থির হয়ে পড়ে। সোহরাবের ভাবনা খাতাটি যেহেতু তার, সেহেতু মীনা মনে করতে পারে সোহরাব চিঠিটা লিখেছে। অপরপক্ষে মীনা মনে করতে পারে চিঠিটার লেখক খালেদ কিংবা তারেক। এসব কিছু মিলে তিনজনই উদ্বিগ্ন। ফলে ভোররাত পর্যন্ত তারা নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করে। আবার ভাবনার কারণ হয় সোহরাবের টিউটোরিয়াল খাতার কারণে পরীক্ষার ভালো ফল করবে, মূলত সোহরাবের ক্ষুব্ধতার কারণ এটি। সব নাটক জুড়ে এমন দ্ব›দ্ব-কলহ বিদ্যমান। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকট এবং পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ও কর্তৃপক্ষের কর্মতৎরতা লক্ষণীয়। এছাড়া চরিত্রসমূহের পারস্পরিক ঈর্ষা, জেদ, রাখা ও ক্ষোভের প্রাধান্য সত্ত্বেও অন্তর্গত মনোজাগতিক আকর্ষণ কার্যকর হয়েছে। নায়ক-নায়িকার মুখে বল উদগীরণ হলেও অন্তরে বেজেছে মধুর সুর। তাই নাটকের শেষ পর্যায়ে সোহরাবের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে-
‘আমি লিফলেটের রুস্তম নই, জ্বলজন্ত
সোহরাব! তোমাকে ডাকছি, মীনা! মীনা!
দরজা খোল। মীনা, দয়া করে আমার সব
কথা শোন।’ (মুনীর চৌধুরী রচনাবলী, ১ম খণ্ড, ১১৮)
আত্মহত্যা করতে উদ্যত মীনা বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়। ধীরে ধীরে সোহরাবের দিকে আসতে থাকে- নাটকেরও যবনিকা ঘটে।
‘চিঠি’ নাটকটি মূলত ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। এই নাটকের কাহিনীতে দেখতে পাওয়া যায় সোহরাব, খালেদ ও তারেক তিন বন্ধু। সোহরাব মেধাবী ছাত্র, তার টিউটোরিয়াল খাতা মিস মীনা মিনহাজ তারেকের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সমস্যাটা তৈরি হয় খাতাটির মধ্যে ‘তাহমিনা’ সম্বোধন করে একটি চিটি লেখা ছিল, যার মধ্যে প্রেমের ব্যাকুল আবেদন ছিল ‘রুস্তম’ ছদ্মনামে তারেকের। চিঠির লেখনী ছিল ক্রীড়ামোদি খালেদের। ফলে খাতাটি মিস মীনা মিনহাজের কাছে যাওয়ার পর থেকেই তিনবন্ধু অস্থির হয়ে পড়ে। সোহরাবের ভাবনা খাতাটি যেহেতু তার, সেহেতু মীনা মনে করতে পারে সোহরাব চিঠিটা লিখেছে। অপরপক্ষে মীনা মনে করতে পারে চিঠিটার লেখক খালেদ কিংবা তারেক। এসব কিছু মিলে তিনজনই উদ্বিগ্ন। ফলে ভোররাত পর্যন্ত তারা নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করে। আবার ভাবনার কারণ হয় সোহরাবের টিউটোরিয়াল খাতার কারণে পরীক্ষার ভালো ফল করবে, মূলত সোহরাবের ক্ষুব্ধতার কারণ এটি। সব নাটক জুড়ে এমন দ্ব›দ্ব-কলহ বিদ্যমান। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকট এবং পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ও কর্তৃপক্ষের কর্মতৎরতা লক্ষণীয়। এছাড়া চরিত্রসমূহের পারস্পরিক ঈর্ষা, জেদ, রাখা ও ক্ষোভের প্রাধান্য সত্ত্বেও অন্তর্গত মনোজাগতিক আকর্ষণ কার্যকর হয়েছে। নায়ক-নায়িকার মুখে বল উদগীরণ হলেও অন্তরে বেজেছে মধুর সুর। তাই নাটকের শেষ পর্যায়ে সোহরাবের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে-
‘আমি লিফলেটের রুস্তম নই, জ্বলজন্ত
সোহরাব! তোমাকে ডাকছি, মীনা! মীনা!
দরজা খোল। মীনা, দয়া করে আমার সব
কথা শোন।’ (মুনীর চৌধুরী রচনাবলী, ১ম খণ্ড, ১১৮)
আত্মহত্যা করতে উদ্যত মীনা বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়। ধীরে ধীরে সোহরাবের দিকে আসতে থাকে- নাটকেরও যবনিকা ঘটে।
তিন.
‘চিঠি’ নাটকের নায়ক সোহরাব। মুনীর চৌধুরীর সযতেœ এ চরিত্রটির স্বাতন্ত্র্যতা মেধায় ও ব্যক্তিত্বে। পরীক্ষা পেছানোর বিরুদ্ধে সোহরাবের প্রতিবাদী ভূমিকা দৃঢ়তার সাথে ফুটে উঠেছে। প্রবল চাপ ও আন্দোলনের মুখেও সোহরাব থেকেছে দৃঢ় ও অনড়। রমীজ আমতলায় পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে এক জনসভার আয়োজন করে। অন্য সহপাঠীরা রমীজকে সমর্থন করলেও সোহরাব কোনোভাবেই তা গ্রহণ করেনি। তাইতো প্রতিবাদের সুস্পষ্ট ভাষা নাটকে রূপ পেয়েছে।
রমীজ।ওহ্! বেশ। আপনি বোধহয় খবর পেয়ে থাকবেন যে, আজকে আমতলায় এক বিরাট ছাত্রসভার আয়োজন করেছিলাম। তাতে আমরা সাধারণ ছাত্ররা, সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে আমরা আমাদের আগামী যাবতীয় পরীক্ষাসমূহের তারিখ পেছাবার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবো। যদি কর্তৃপক্ষ তারিখ পিছিয়ে দিতে রাজি হন ভালো; না হলে আমরা পরীক্ষা বর্জন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা ঘুরে ঘুরে সবার মতামত সংগ্রহ করেছি। আপনি কি পরীক্ষা দেয়ার পক্ষে, না বিরুদ্ধে?
সোহরাব। বিরুদ্ধে। একশবার বিরুদ্ধে। আমি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় সত্য-মিথ্যা সব কিছুর বিরুদ্ধে। আমি মন দেয়া-নেয়ার বিরুদ্ধে। তার জন্য নানারকম কলাকৌশল উদ্ভাবন করার বিরুদ্ধে। গুণ গুণ করে কথা বলার বিরুদ্ধে। কথা না বলার বিরুদ্ধে। কথা না বলে চিঠি লেখালেখির বিরুদ্ধে। আমাকে আদৌ জানেন না বলে আমার ওপর অযথা দোষারোপ করছেন আমি প্রেমের বিরুদ্ধে। আমি পরীক্ষার বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধ পরীক্ষা দেয়ার বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধভাবে পরীক্ষা না নেয়ার বিরুদ্ধে। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?
মুনীর চৌধুরী রচনাবলী, ১ম খণ্ড (পৃ- ১৩২)
আবার অন্যদিকে সোহরাব ভালো ফল প্রত্যাশী, প্রতিযোগিতা পরায়ন, জেদী এবং জঙ্গিমেজাজের। টিউটোরিয়াল খাতাটা হাতছাড়া হওয়া এবং প্রেমপত্র নিয়ে জটিলতা সোহরাবের ব্যক্তিত্বের ওপর আঘাত পড়েছে ভেবে সোহরাব মনে কষ্ট পায়। তারপরও প্রতিদ্ব›দ্বী মীনার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েও অন্য সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে বলে-
‘তোমরা মিস মিনা মিনহাজকে জানো না, পরীক্ষার ব্যাপারে একেবারে রাক্ষসী! প্রতিদ্ব›দ্বীকে ঘায়েল করতে ওর কুহকের অন্ত নেই। আমার খাতাটাও চিবিয়ে খাবে, নিজেরগুলো তার সঙ্গে মিশিয়ে চিবোবে। তারপর পরীক্ষার খাতায় সে সব জিনিস এমনভাবে উগলে দেবে যে, সাধ্য কি পরীক্ষকরা তাকে দ্বিতীয় স্থানে ফেলে রাখে। সেই শোকে আমি মুহ্যমান।’ (পূর্বোক্ত, পৃ. -১৩০)
সোহরাব চরিত্র সম্পর্কে সমালোচক বলেছেন-
‘কোনো কিছু সম্পর্কে তার (সোহরাব) ধৈর্য অত্যন্ত কম। একজন ভালো ছাত্রের এ গুণটুকু না থাকায় তার চরিত্রের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে নানা অসঙ্গতি। নাট্যকার নিতান্ত হাস্যরস সৃষ্টির অভিপ্রায়ে তার মধ্যে বালক-সুলভ গুণগুলো আরোপ করেছেন। যেমন, তার ছিনিয়ে নেয়া খাতাটির জন্য সে মীনার বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করেছে, তার একটি খমড়া খাতা জোর করে হাত করেছে, বিভাগীয় সেমিনারে প্রচণ্ড ঝগড়া করেছে। কিন্তু আপাও বিপরীত এসব কর্মকাণ্ডের অন্তরালে সোহরাবের মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল মীনার প্রতি তার দুর্বলতা। মীনার খসড়া খাতার ভেতরে ম্যাগানিফাইং গøাস দিয়ে তন্ন তন্ন করে সে আবিষ্কার করেছে মীনার অন্তর্লোকের প্রতিচ্ছবি। সে বাকপটু। কথার পিঠে কথা সাজাতে তার তুলনা নেই।’
(রামেন্দ মজুমদার সম্পাদিত থিয়েটার, পৃ-১৫৪)
এ থেকে বোঝা যায় ‘চিঠি’ নাটকের সোহরাব মুনীর চৌধুরীর অত্যন্ত যতœশীল সৃষ্টি। যার ভেতর দিয়ে পুরো নাটকের দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে নাট্যকার। সোহরাব চরিত্রে রয়েছে ‘মনন, রসবোধ ও প্রেমানুভূতির উজ্জ্বল প্রকাশ।’
‘চিঠি’ নাটকের নায়ক সোহরাব। মুনীর চৌধুরীর সযতেœ এ চরিত্রটির স্বাতন্ত্র্যতা মেধায় ও ব্যক্তিত্বে। পরীক্ষা পেছানোর বিরুদ্ধে সোহরাবের প্রতিবাদী ভূমিকা দৃঢ়তার সাথে ফুটে উঠেছে। প্রবল চাপ ও আন্দোলনের মুখেও সোহরাব থেকেছে দৃঢ় ও অনড়। রমীজ আমতলায় পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে এক জনসভার আয়োজন করে। অন্য সহপাঠীরা রমীজকে সমর্থন করলেও সোহরাব কোনোভাবেই তা গ্রহণ করেনি। তাইতো প্রতিবাদের সুস্পষ্ট ভাষা নাটকে রূপ পেয়েছে।
রমীজ।ওহ্! বেশ। আপনি বোধহয় খবর পেয়ে থাকবেন যে, আজকে আমতলায় এক বিরাট ছাত্রসভার আয়োজন করেছিলাম। তাতে আমরা সাধারণ ছাত্ররা, সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে আমরা আমাদের আগামী যাবতীয় পরীক্ষাসমূহের তারিখ পেছাবার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবো। যদি কর্তৃপক্ষ তারিখ পিছিয়ে দিতে রাজি হন ভালো; না হলে আমরা পরীক্ষা বর্জন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা ঘুরে ঘুরে সবার মতামত সংগ্রহ করেছি। আপনি কি পরীক্ষা দেয়ার পক্ষে, না বিরুদ্ধে?
সোহরাব। বিরুদ্ধে। একশবার বিরুদ্ধে। আমি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় সত্য-মিথ্যা সব কিছুর বিরুদ্ধে। আমি মন দেয়া-নেয়ার বিরুদ্ধে। তার জন্য নানারকম কলাকৌশল উদ্ভাবন করার বিরুদ্ধে। গুণ গুণ করে কথা বলার বিরুদ্ধে। কথা না বলার বিরুদ্ধে। কথা না বলে চিঠি লেখালেখির বিরুদ্ধে। আমাকে আদৌ জানেন না বলে আমার ওপর অযথা দোষারোপ করছেন আমি প্রেমের বিরুদ্ধে। আমি পরীক্ষার বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধ পরীক্ষা দেয়ার বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধভাবে পরীক্ষা না নেয়ার বিরুদ্ধে। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?
মুনীর চৌধুরী রচনাবলী, ১ম খণ্ড (পৃ- ১৩২)
আবার অন্যদিকে সোহরাব ভালো ফল প্রত্যাশী, প্রতিযোগিতা পরায়ন, জেদী এবং জঙ্গিমেজাজের। টিউটোরিয়াল খাতাটা হাতছাড়া হওয়া এবং প্রেমপত্র নিয়ে জটিলতা সোহরাবের ব্যক্তিত্বের ওপর আঘাত পড়েছে ভেবে সোহরাব মনে কষ্ট পায়। তারপরও প্রতিদ্ব›দ্বী মীনার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েও অন্য সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে বলে-
‘তোমরা মিস মিনা মিনহাজকে জানো না, পরীক্ষার ব্যাপারে একেবারে রাক্ষসী! প্রতিদ্ব›দ্বীকে ঘায়েল করতে ওর কুহকের অন্ত নেই। আমার খাতাটাও চিবিয়ে খাবে, নিজেরগুলো তার সঙ্গে মিশিয়ে চিবোবে। তারপর পরীক্ষার খাতায় সে সব জিনিস এমনভাবে উগলে দেবে যে, সাধ্য কি পরীক্ষকরা তাকে দ্বিতীয় স্থানে ফেলে রাখে। সেই শোকে আমি মুহ্যমান।’ (পূর্বোক্ত, পৃ. -১৩০)
সোহরাব চরিত্র সম্পর্কে সমালোচক বলেছেন-
‘কোনো কিছু সম্পর্কে তার (সোহরাব) ধৈর্য অত্যন্ত কম। একজন ভালো ছাত্রের এ গুণটুকু না থাকায় তার চরিত্রের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে নানা অসঙ্গতি। নাট্যকার নিতান্ত হাস্যরস সৃষ্টির অভিপ্রায়ে তার মধ্যে বালক-সুলভ গুণগুলো আরোপ করেছেন। যেমন, তার ছিনিয়ে নেয়া খাতাটির জন্য সে মীনার বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করেছে, তার একটি খমড়া খাতা জোর করে হাত করেছে, বিভাগীয় সেমিনারে প্রচণ্ড ঝগড়া করেছে। কিন্তু আপাও বিপরীত এসব কর্মকাণ্ডের অন্তরালে সোহরাবের মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল মীনার প্রতি তার দুর্বলতা। মীনার খসড়া খাতার ভেতরে ম্যাগানিফাইং গøাস দিয়ে তন্ন তন্ন করে সে আবিষ্কার করেছে মীনার অন্তর্লোকের প্রতিচ্ছবি। সে বাকপটু। কথার পিঠে কথা সাজাতে তার তুলনা নেই।’
(রামেন্দ মজুমদার সম্পাদিত থিয়েটার, পৃ-১৫৪)
এ থেকে বোঝা যায় ‘চিঠি’ নাটকের সোহরাব মুনীর চৌধুরীর অত্যন্ত যতœশীল সৃষ্টি। যার ভেতর দিয়ে পুরো নাটকের দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে নাট্যকার। সোহরাব চরিত্রে রয়েছে ‘মনন, রসবোধ ও প্রেমানুভূতির উজ্জ্বল প্রকাশ।’
চার.
‘চিঠি’ নাটকের নায়িকা মিস মীনা মিনহাজ। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসাইটে’ ছাত্রী বলা হয়। সে অত্যন্ত তেজী, জেদি, মেধাবী, আত্মসচেতন, আধুনিকা ও আকর্ষণীয়। সাধারণ মেয়ের পক্ষে যা করা সম্ভব না, তা মীনার পক্ষে করা কঠিন কোন কাজ না। সোহরাবের সঙ্গে তার বিরোধ খাতা ছিনিয়ে নেয়া ও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সোচ্চার ও কঠোর মনোবৃত্তির কারণ। তবে মীনার দুর্বলতা সোহরাবকে ঘিরে পুঞ্জিভূত। ফলে মীনা সোহরাবকে খাতা ফেরত দিলেও চিঠিটা সযতেœ লালন করেছে।
মীনার চরিত্রের দৃঢ়তার পেছনে কাজ করেছে অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এবং পুলিশ অফিসার বড় ভাই আসাদুজ্জামানের অভিভাবকত্ব ও স্নেহ। সোহরাবের প্রতি হৃদয়বৃত্তিক দুর্বলতার কারণেই মীনা বড় ভাইয়ের ওপর রাগ করতে আত্মহত্যা করতে পারে না এক সোহরাবের ডাকে তার অভিমান ভাঙে ও বদ্ধ দুয়ার খুলে বের হয়ে আসে।
তাই-ই মীনার স্বভাব নাটকে ফুটে উঠেছে-
মীনা। আমার রাফখাতাটা! পশু পশু! অনুভূতিহীন বর্বর চোয়াড়ে চাষা! কেবল চুরি করে আম মেটেনি। দশজনকে ডেকে দেখিয়েছে, নিজে বাহাদুরী নিয়েছে, একটা মেয়ে সম্পর্কে কুৎসিৎ কথা রটিয়েছে। সামনে পেলে ওঁকে আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলব।
(মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১ম খণ্ড, পৃ-১৬২)
‘চিঠি’ নাটকের নায়িকা মিস মীনা মিনহাজ। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসাইটে’ ছাত্রী বলা হয়। সে অত্যন্ত তেজী, জেদি, মেধাবী, আত্মসচেতন, আধুনিকা ও আকর্ষণীয়। সাধারণ মেয়ের পক্ষে যা করা সম্ভব না, তা মীনার পক্ষে করা কঠিন কোন কাজ না। সোহরাবের সঙ্গে তার বিরোধ খাতা ছিনিয়ে নেয়া ও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সোচ্চার ও কঠোর মনোবৃত্তির কারণ। তবে মীনার দুর্বলতা সোহরাবকে ঘিরে পুঞ্জিভূত। ফলে মীনা সোহরাবকে খাতা ফেরত দিলেও চিঠিটা সযতেœ লালন করেছে।
মীনার চরিত্রের দৃঢ়তার পেছনে কাজ করেছে অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এবং পুলিশ অফিসার বড় ভাই আসাদুজ্জামানের অভিভাবকত্ব ও স্নেহ। সোহরাবের প্রতি হৃদয়বৃত্তিক দুর্বলতার কারণেই মীনা বড় ভাইয়ের ওপর রাগ করতে আত্মহত্যা করতে পারে না এক সোহরাবের ডাকে তার অভিমান ভাঙে ও বদ্ধ দুয়ার খুলে বের হয়ে আসে।
তাই-ই মীনার স্বভাব নাটকে ফুটে উঠেছে-
মীনা। আমার রাফখাতাটা! পশু পশু! অনুভূতিহীন বর্বর চোয়াড়ে চাষা! কেবল চুরি করে আম মেটেনি। দশজনকে ডেকে দেখিয়েছে, নিজে বাহাদুরী নিয়েছে, একটা মেয়ে সম্পর্কে কুৎসিৎ কথা রটিয়েছে। সামনে পেলে ওঁকে আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলব।
(মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১ম খণ্ড, পৃ-১৬২)
পাঁচ.
‘চিঠি’ নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র প্রক্টর বদরুল হাসান। পেশায় তিনি শিক্ষক, কিন্তু দায়িত্বে আছেন প্রক্টরের। তিনি অধিক মাত্রায় দায়িত্ববান হওয়ার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়। তিনি ব্যক্তিত্বে গভীর ছিলেন না। স্বাভাবিক বিষয়ে তার অস্বাভাবিক আচরণ প্রতিনিয়ত ঘটতো ছাত্রছাত্রীদের সাথে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক চলাফেরা মেনে নিতে পারতেন না। তিনি ছিলেন সন্দেহপ্রবণ ও বাতিকগ্রস্ত প্রকৃতির মানুষ। অবশ্য এমন আচরণের জন্য তাকে বেশ যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে এবং তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন-
‘প্রক্টরের চাকরি বড় দুঃখের। সরকারি পুলিশ আমাদের জব্দ করতে চেষ্টা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে অষ্টপ্রহর হুকুমের ওপর রেখেছে। ছাত্ররা আমার সাথে বিষাক্ত বস্তু নিক্ষেপ করেছে। আর আমার সহ্য হয় না। আমি এমনিতেও স্থির করেছি পদত্যাগ করব। আমার এই শেষ অবস্থায়, তুমি আত্মহত্যা করে আমাকে আবার জীবননাশি করতে বাধ্য কর না।’ (পূর্বোত্ত, পৃ-১৯৫)
একথা থেকে বোঝা যায় প্রক্টর বদরুল হাসান দায়িত্ব পালনে কতটা নাস্তানাবুদ হয়েছেন এবার অসহায়।
পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামলে প্রক্টরের এক হাস্যকর কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। প্রক্টর বদরুল হাসান আন্দোলনের কয়েকশ লিফলেট, সংগ্রহ করে রাখে এবং মনে করে এটি তার দায়িত্বপূর্ণ কাজ।
হাসান। এই যে পেয়েছি। একেবারে এক ঢং। বুঝলে আসা, এই যে শ-শ লিফলেট এখানে দেখছ, এগুলো সব পরীক্ষা পেছাবার মহা আন্দোলনের ঐতিহাসিক দলিল স্বরূপ। বছরের হিসেব ক্রমিক নম্বর দিয়ে। সাজিয়ে রেখেছি। তোমরা পুলিশে লোক এর আসল মূল্য কোনোদিন বুঝবে না। আত্মত্যাগের মহাকীর্তি ঘোষণা করে যুগ যুগ ধরে এই মহান আন্দোলনের ধারা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। আন্তরিকতায়, সংঘবদ্ধতায়, উচ্চকনিষ্ঠতায় আর সকল জাতীয় আন্দোলন এর কাছে তুচ্ছ। মিউজিয়মের কিউরেটর ডক্টর দানী বলেছেন যে তিনি এগুলো ইমারতের মলাটে বাঁধাই করে এশিয়াটিক সোসাইটির লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রাখবেন।’ (পূর্বোক্ত, পৃ-১৪৯)
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় প্রক্টর হাসানের বুদ্ধি এবং ব্যক্তিত্বের গভীরতা কতটুকু। এই চরিত্রের মাধ্যমে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী কৌতুক রসের নির্মাণ করেছেন এবং হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন।
‘চিঠি’ নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র প্রক্টর বদরুল হাসান। পেশায় তিনি শিক্ষক, কিন্তু দায়িত্বে আছেন প্রক্টরের। তিনি অধিক মাত্রায় দায়িত্ববান হওয়ার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়। তিনি ব্যক্তিত্বে গভীর ছিলেন না। স্বাভাবিক বিষয়ে তার অস্বাভাবিক আচরণ প্রতিনিয়ত ঘটতো ছাত্রছাত্রীদের সাথে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক চলাফেরা মেনে নিতে পারতেন না। তিনি ছিলেন সন্দেহপ্রবণ ও বাতিকগ্রস্ত প্রকৃতির মানুষ। অবশ্য এমন আচরণের জন্য তাকে বেশ যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে এবং তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন-
‘প্রক্টরের চাকরি বড় দুঃখের। সরকারি পুলিশ আমাদের জব্দ করতে চেষ্টা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে অষ্টপ্রহর হুকুমের ওপর রেখেছে। ছাত্ররা আমার সাথে বিষাক্ত বস্তু নিক্ষেপ করেছে। আর আমার সহ্য হয় না। আমি এমনিতেও স্থির করেছি পদত্যাগ করব। আমার এই শেষ অবস্থায়, তুমি আত্মহত্যা করে আমাকে আবার জীবননাশি করতে বাধ্য কর না।’ (পূর্বোত্ত, পৃ-১৯৫)
একথা থেকে বোঝা যায় প্রক্টর বদরুল হাসান দায়িত্ব পালনে কতটা নাস্তানাবুদ হয়েছেন এবার অসহায়।
পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামলে প্রক্টরের এক হাস্যকর কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। প্রক্টর বদরুল হাসান আন্দোলনের কয়েকশ লিফলেট, সংগ্রহ করে রাখে এবং মনে করে এটি তার দায়িত্বপূর্ণ কাজ।
হাসান। এই যে পেয়েছি। একেবারে এক ঢং। বুঝলে আসা, এই যে শ-শ লিফলেট এখানে দেখছ, এগুলো সব পরীক্ষা পেছাবার মহা আন্দোলনের ঐতিহাসিক দলিল স্বরূপ। বছরের হিসেব ক্রমিক নম্বর দিয়ে। সাজিয়ে রেখেছি। তোমরা পুলিশে লোক এর আসল মূল্য কোনোদিন বুঝবে না। আত্মত্যাগের মহাকীর্তি ঘোষণা করে যুগ যুগ ধরে এই মহান আন্দোলনের ধারা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। আন্তরিকতায়, সংঘবদ্ধতায়, উচ্চকনিষ্ঠতায় আর সকল জাতীয় আন্দোলন এর কাছে তুচ্ছ। মিউজিয়মের কিউরেটর ডক্টর দানী বলেছেন যে তিনি এগুলো ইমারতের মলাটে বাঁধাই করে এশিয়াটিক সোসাইটির লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রাখবেন।’ (পূর্বোক্ত, পৃ-১৪৯)
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় প্রক্টর হাসানের বুদ্ধি এবং ব্যক্তিত্বের গভীরতা কতটুকু। এই চরিত্রের মাধ্যমে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী কৌতুক রসের নির্মাণ করেছেন এবং হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন।
ছয়.
‘চিঠি’ নাটকের অন্য চরিত্রগুলো খুব বেশি উল্লেখযোগ্য না হলেও চরিত্রগুলোর ভূমিকা নাটকের নানা অঙ্গে গুরুত্ব বহন করে। আন্দোলন বিরোধী পক্ষে কাজ করেছে খালেদ, তারেক ও সোহরাব। আর আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছে রমীজ, আফতাব ও খয়ের। পুলিশ অফিসার আসাদ মীনার বড় ভাই। তার চরিত্রের পালনীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক। আসাদ বুদ্ধিদীপ্ত ও কাল সচেতন। বর্তমানের প্রতিক্রিয়াশীল পুলিশ সমাজে আসাদ এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। এ নাটকের পুরুষ চরিত্র সম্পর্কে নাট্যগবেষক জিয়াউল হাসান বলেছেন-
‘নাটকটির প্রায় সবগুলি চরিত্রই কমবেশি হাস্যরসাত্মক। এদের জীবনের স্ববিরোধিতা ও অসঙ্গতিই আমাদের মনে হাসির উদ্রেক করেছে। তবে স্থান ও সময়ের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তম জীবনের গণ্ডি থেকে এ চরিত্রগুলো চিহ্নিত হয়নি বলে এর আবেদন সার্বজনীন হতে পারেনি।’
(রামেন্দু মজুমদার সম্পাদিত, থিয়েটার, পৃ-১২৬)
এককথায় বলা যায় মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’ নাটকটি চরিত্র সৃষ্টির দিক দিয়ে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘চিঠি’ নাটকের চরিত্র নির্মাণ সম্পর্কে কবীর চৌধুরী বলেছেন-
‘প্রতিটি চরিত্র স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। প্রতিভাবান ছাত্র রোমান্টিকতা বিরোধী নায়ক সোহরাব, ঈষৎ লাজুক ভাবালুতামণ্ডিত তারেক, ক্রীড়া বিশারদ খালেদ, আদর্শহীন ডিরেক্ট এ্যাকশনে বিশ্বাসী উচ্চকণ্ঠ ছাত্রনেতা রমীজ, ভাষণপটু জঙ্গি ছাত্র আফতাব, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বুদ্ধিমতী থেকে তেজোদীপ্তা নায়িকা মীনা, উচ্ছলা অপেক্ষাকৃত লঘুচিত্তা সহপাঠিনী রুমা, কর্তব্যনিষ্ঠ লিফলেট সংগ্রহে আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হাসান ঘটনার টানাপড়েনে কিছুটা বিমূঢ় মীনার স্নেহশীল পুলিশ-অফিসার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আসাদ-চিঠি নাটকের এইসব চরিত্রই তাদের আচার-আচরণ এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে।
‘চিঠি’ নাটকের অন্য চরিত্রগুলো খুব বেশি উল্লেখযোগ্য না হলেও চরিত্রগুলোর ভূমিকা নাটকের নানা অঙ্গে গুরুত্ব বহন করে। আন্দোলন বিরোধী পক্ষে কাজ করেছে খালেদ, তারেক ও সোহরাব। আর আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছে রমীজ, আফতাব ও খয়ের। পুলিশ অফিসার আসাদ মীনার বড় ভাই। তার চরিত্রের পালনীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক। আসাদ বুদ্ধিদীপ্ত ও কাল সচেতন। বর্তমানের প্রতিক্রিয়াশীল পুলিশ সমাজে আসাদ এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। এ নাটকের পুরুষ চরিত্র সম্পর্কে নাট্যগবেষক জিয়াউল হাসান বলেছেন-
‘নাটকটির প্রায় সবগুলি চরিত্রই কমবেশি হাস্যরসাত্মক। এদের জীবনের স্ববিরোধিতা ও অসঙ্গতিই আমাদের মনে হাসির উদ্রেক করেছে। তবে স্থান ও সময়ের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তম জীবনের গণ্ডি থেকে এ চরিত্রগুলো চিহ্নিত হয়নি বলে এর আবেদন সার্বজনীন হতে পারেনি।’
(রামেন্দু মজুমদার সম্পাদিত, থিয়েটার, পৃ-১২৬)
এককথায় বলা যায় মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’ নাটকটি চরিত্র সৃষ্টির দিক দিয়ে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘চিঠি’ নাটকের চরিত্র নির্মাণ সম্পর্কে কবীর চৌধুরী বলেছেন-
‘প্রতিটি চরিত্র স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। প্রতিভাবান ছাত্র রোমান্টিকতা বিরোধী নায়ক সোহরাব, ঈষৎ লাজুক ভাবালুতামণ্ডিত তারেক, ক্রীড়া বিশারদ খালেদ, আদর্শহীন ডিরেক্ট এ্যাকশনে বিশ্বাসী উচ্চকণ্ঠ ছাত্রনেতা রমীজ, ভাষণপটু জঙ্গি ছাত্র আফতাব, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বুদ্ধিমতী থেকে তেজোদীপ্তা নায়িকা মীনা, উচ্ছলা অপেক্ষাকৃত লঘুচিত্তা সহপাঠিনী রুমা, কর্তব্যনিষ্ঠ লিফলেট সংগ্রহে আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হাসান ঘটনার টানাপড়েনে কিছুটা বিমূঢ় মীনার স্নেহশীল পুলিশ-অফিসার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আসাদ-চিঠি নাটকের এইসব চরিত্রই তাদের আচার-আচরণ এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে।
No comments