নাটকঃ নবান্ন । লেখকঃ ( বিজন ভট্টাচার্যের ) রিভিও
নবান্ন হল বিজন ভট্টাচার্যের
লেখা একটি বাংলা
নাটক। ১৯৪৪ সালে ভারতীয় গণনাট্য ঐসংঘের
প্রযোজনায় ও শম্ভু মিত্রের
পরিচালনায় এই নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল। এরপর ১৯৪৮ সালে বহুরূপী
নাট্যদলের প্রযোজনায় ও কুমার রায়ের
পরিচালনায় নবান্ন মঞ্চস্থ হয়। নাটকটির বিষয় পঞ্চাশের মন্বন্তর
(ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ)। গণনাট্য সংঘ এই নাটকটিকে ভারতের নানা জায়গায় তাদের 'ভয়েস অফ বেঙ্গল'
উৎসবের অঙ্গ হিসেবে মঞ্চস্থ করে দুর্ভিক্ষের ত্রাণে লক্ষাধিক টাকা তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলায় ২০ লক্ষ মানুষ অনাহার,
অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিল। নাটকের প্রধান চরিত্র প্রধান সমাদ্দার। তিনি বাংলার এক চাষি। প্রধান সমাদ্দারের পরিবার অনাহারে কেমন কষ্ট পেয়েছিল,
তা-ই এই নাটকের বিষয়বস্তু।
নবান্ন নাটক নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ফিরে তাকাতে হয় ইতিহাসের দিকে, যে-ইতিহাসের আয়নায় ধরা পড়ে দেশকাল পরিপ্রেক্ষিতের চিত্র। ইতিহাস জন্ম দেয় নতুন কাল নতুন সময় ও নতুন ঘটনার। একেকটা যুগ পার হয় আর মানুষের চিন্তায় ও মননে সময়ের প্রতিচ্ছবির ছাপ সুস্পষ্ট হয় এবং তা থেকেই জন্ম নেয় নব-নব দৃষ্টিভঙ্গির। সেই দৃষ্টিভঙ্গির ক্রোড় থেকে বেরিয়ে আসে যুগান্তকারী কোনো বিশেষ সৃষ্টি যা কিনা আবহমান নদীর মতো ধাবিত হয় সময়ের হাত ধরে, অবশ্য সেটা দেশকাল ও রাজনীতির আঙিনায়। যা কিনা মানুষের চেতনার দরজায় আঘাত করে। নবান্ন এমনই এক সৃষ্টি। নবান্ন সম্পর্কে নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য নিজেই বলেছেন – ‘আবেগ না হলে বোধহয় কবিতার জন্ম হয় না – অনুভূতি না থাকলে জীবনযন্ত্রণা না থাকলে কোনো সৃষ্টিই বোধহয় সম্ভব নয়।’ নবান্ন নাটক নিয়ে আলোচনার শুরুতেই আমরা ফিরে তাকাব নবান্ন রচনার ঠিক আগে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে। ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে শুরু হয়েছিল ঘন ঘন পরিবর্তন। আর তারই ফলে জাতির জীবনে নিদারুণ দুর্যোগ নেমে এসেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে এবং স্বাভাবিক বেঁচে থাকা ব্যাহত হতে শুরু করেছিল সমগ্র বিশ্বে। নাৎসিবাদের অভ্যুত্থানের পর থেকেই চলছিল গণতন্ত্রের নিধন, প্রগতিমান সংস্কৃতির নিষ্ঠুরতম অবদমন। আর তখনই ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধের প্রতিরোধে সংগঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন। বিশ্ববন্দিত বুদ্ধিজীবীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন ভারতীয় লেখক-শিল্পীবৃন্দ। আর তার পৌরোহিত্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্পেনের গণতন্ত্র রক্ষার সপক্ষে, আবিসিনিয়ার স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে, মিউনিখে মুক্তিফৌজের মৃত্যুঞ্জয়ী সংগ্রামের সমর্থনে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয়দের উদ্দীপ্ত করেছিলেন। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। ১৯৪১-এ হিটলার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলো সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ভারতীয় প্রগতিবাদীরা বিশ্বাস করলেন, বিশ্বমানবতা বিপন্ন কেননা সোভিয়েত দেশ বিশ্বমানবতার দুর্গ। এ যুদ্ধ জনযুদ্ধ। গঠিত হলো সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি। ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের সপক্ষে সংগ্রামের এক দৃপ্ত সৈনিক বিজন ভট্টাচার্যের লেখনী ক্ষুরধার হয়ে উঠল। ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় দেখা দিলো এক ভয়ঙ্কর মন্বন্তর। লাখ-লাখ লোকের মৃত্যু হলো। মুখিয়ে উঠল চারিদিকে সামাজিক অবক্ষয়। অবিভক্ত বাংলার যন্ত্রণা নিঙড়ে জন্ম নিল বলিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের গভীর থেকে বিজন ভট্টাচার্য আত্মপ্রকাশ করলেন নাট্যকার রূপে।
অস্থির রাজনীতির ভেতর নবান্ন নাটকের জন্ম। তখনো বাঙালির রঙ্গশালা উজ্জ্বলিত ছিল না তা নয়। সেই সময়টাতে অধিকাংশ নাটকের কাহিনি ছিল প্রধানত রাজা-রাজরানিদের কাহিনি, পুরাণ ও ইতিহাসের চর্বিতচর্বণ। সামাজিক নাটক একেবারেই যে ছিল না তাও নয়, কিন্তু সেখানে মধ্যবিত্ত জীবনের গুটিকয়েক কল্পিত সমস্যা ছাড়া ব্যাপকভাবে জনজীবনের চিত্র অঙ্কিত হয়নি। অর্থাৎ দেব-দেবীনির্ভর কাহিনি থেকে বেরিয়ে এলেও একেবারে মাটির কাছাকাছি থাকা জনজীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেনি কোনো নাট্যকারের হাতে নবান্ন নাটকের মতো। এমনকি নাট্যাচার্য শিশির কুমারভাদুড়ীর মতো যুগন্ধর প্রতিভাবান মানুষও তখন আলমগীর-সীতার রূপকল্প সাধনায় মগ্ন ছিলেন।৩
যেহেতু এক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নবান্ন নাটকের জন্ম সেহেতু তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা কীভাবে বুনিয়াদ হয়ে উঠল একটি বাস্তবধর্মী নাটকের, সেটাকে পর্যালোচনা করতে হলে রাজনীতির চিত্রটি তুলে ধরা জরুরি এখানে।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে হরিজন নামক সাপ্তাহিকীতে লিখিত একটি প্রবন্ধে গান্ধি প্রথম ‘ভারত
নবান্ন নাটক নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ফিরে তাকাতে হয় ইতিহাসের দিকে, যে-ইতিহাসের আয়নায় ধরা পড়ে দেশকাল পরিপ্রেক্ষিতের চিত্র। ইতিহাস জন্ম দেয় নতুন কাল নতুন সময় ও নতুন ঘটনার। একেকটা যুগ পার হয় আর মানুষের চিন্তায় ও মননে সময়ের প্রতিচ্ছবির ছাপ সুস্পষ্ট হয় এবং তা থেকেই জন্ম নেয় নব-নব দৃষ্টিভঙ্গির। সেই দৃষ্টিভঙ্গির ক্রোড় থেকে বেরিয়ে আসে যুগান্তকারী কোনো বিশেষ সৃষ্টি যা কিনা আবহমান নদীর মতো ধাবিত হয় সময়ের হাত ধরে, অবশ্য সেটা দেশকাল ও রাজনীতির আঙিনায়। যা কিনা মানুষের চেতনার দরজায় আঘাত করে। নবান্ন এমনই এক সৃষ্টি। নবান্ন সম্পর্কে নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য নিজেই বলেছেন – ‘আবেগ না হলে বোধহয় কবিতার জন্ম হয় না – অনুভূতি না থাকলে জীবনযন্ত্রণা না থাকলে কোনো সৃষ্টিই বোধহয় সম্ভব নয়।’ নবান্ন নাটক নিয়ে আলোচনার শুরুতেই আমরা ফিরে তাকাব নবান্ন রচনার ঠিক আগে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে। ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে শুরু হয়েছিল ঘন ঘন পরিবর্তন। আর তারই ফলে জাতির জীবনে নিদারুণ দুর্যোগ নেমে এসেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে এবং স্বাভাবিক বেঁচে থাকা ব্যাহত হতে শুরু করেছিল সমগ্র বিশ্বে। নাৎসিবাদের অভ্যুত্থানের পর থেকেই চলছিল গণতন্ত্রের নিধন, প্রগতিমান সংস্কৃতির নিষ্ঠুরতম অবদমন। আর তখনই ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধের প্রতিরোধে সংগঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন। বিশ্ববন্দিত বুদ্ধিজীবীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন ভারতীয় লেখক-শিল্পীবৃন্দ। আর তার পৌরোহিত্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্পেনের গণতন্ত্র রক্ষার সপক্ষে, আবিসিনিয়ার স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে, মিউনিখে মুক্তিফৌজের মৃত্যুঞ্জয়ী সংগ্রামের সমর্থনে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয়দের উদ্দীপ্ত করেছিলেন। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। ১৯৪১-এ হিটলার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলো সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ভারতীয় প্রগতিবাদীরা বিশ্বাস করলেন, বিশ্বমানবতা বিপন্ন কেননা সোভিয়েত দেশ বিশ্বমানবতার দুর্গ। এ যুদ্ধ জনযুদ্ধ। গঠিত হলো সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি। ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের সপক্ষে সংগ্রামের এক দৃপ্ত সৈনিক বিজন ভট্টাচার্যের লেখনী ক্ষুরধার হয়ে উঠল। ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় দেখা দিলো এক ভয়ঙ্কর মন্বন্তর। লাখ-লাখ লোকের মৃত্যু হলো। মুখিয়ে উঠল চারিদিকে সামাজিক অবক্ষয়। অবিভক্ত বাংলার যন্ত্রণা নিঙড়ে জন্ম নিল বলিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের গভীর থেকে বিজন ভট্টাচার্য আত্মপ্রকাশ করলেন নাট্যকার রূপে।
অস্থির রাজনীতির ভেতর নবান্ন নাটকের জন্ম। তখনো বাঙালির রঙ্গশালা উজ্জ্বলিত ছিল না তা নয়। সেই সময়টাতে অধিকাংশ নাটকের কাহিনি ছিল প্রধানত রাজা-রাজরানিদের কাহিনি, পুরাণ ও ইতিহাসের চর্বিতচর্বণ। সামাজিক নাটক একেবারেই যে ছিল না তাও নয়, কিন্তু সেখানে মধ্যবিত্ত জীবনের গুটিকয়েক কল্পিত সমস্যা ছাড়া ব্যাপকভাবে জনজীবনের চিত্র অঙ্কিত হয়নি। অর্থাৎ দেব-দেবীনির্ভর কাহিনি থেকে বেরিয়ে এলেও একেবারে মাটির কাছাকাছি থাকা জনজীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেনি কোনো নাট্যকারের হাতে নবান্ন নাটকের মতো। এমনকি নাট্যাচার্য শিশির কুমারভাদুড়ীর মতো যুগন্ধর প্রতিভাবান মানুষও তখন আলমগীর-সীতার রূপকল্প সাধনায় মগ্ন ছিলেন।৩
যেহেতু এক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নবান্ন নাটকের জন্ম সেহেতু তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা কীভাবে বুনিয়াদ হয়ে উঠল একটি বাস্তবধর্মী নাটকের, সেটাকে পর্যালোচনা করতে হলে রাজনীতির চিত্রটি তুলে ধরা জরুরি এখানে।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে হরিজন নামক সাপ্তাহিকীতে লিখিত একটি প্রবন্ধে গান্ধি প্রথম ‘ভারত
ছাড়ো’ স্লোগানটি ব্যবহার করেন এবং এটা ছিল ভারতকে আশু স্বাধীনতাদানেরই আহ্বান। ৬ জুলাই ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী কর্তৃক ভারতরক্ষা সমর্থনের সঙ্গে সঙ্গে ‘ভারত ছাড়ো’ দাবিটিও অনুমোদিত হয়। এই প্রস্তাব মোতাবেক কংগ্রেসের দাবি বাস্তবায়নের জন্য গান্ধি ব্যাপক আইন অমান্য আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেন,
যাতে অহিংসার সীমানা অতিক্রমও বৈধ হবে। ঘোষণাটি ছিল ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ হুমকিস্বরূপ। আর শুরু হলো আগস্ট-আন্দোলন। আর সে-আন্দোলনের প্রভাব পড়ল সাধারণ মানুষের জীবনে। চলমান জীবন ব্যাহত হলো আর তাই দেখা দিলো গণবিক্ষোভ। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতিহিংসায় দুই হাজারের বেশি আন্দোলনকারী নিহত হলো এবং ৬০ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হলো। ক্ষতিগ্রস্ত হলো শহর থেকে শহর,
গ্রাম থেকে গ্রাম। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ‘আগস্ট বিপ্লব’ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। কিন্তু জাতীয় আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত হলো। অহিংসা মন্ত্রে দীক্ষিত হলেও জনগণ স্বাধীনতার জন্যে সশস্ত্র সংগ্রাম চালানোর অপরিহার্যতা উপলব্ধি করেছিল।
১৯৪৩ ও ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অনেকগুলো অঞ্চলে অজন্মার কারণে খাদ্যাভাব এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার কোনো কোনো অঞ্চলে এই অবস্থা মারাত্মক হয়ে ওঠে। ১৯৪৩-৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের জন্যে স্থানীয় উৎপাদন-ঘাটতি অপেক্ষা ব্রিটিশ প্রশাসনের দুর্বল বণ্টন-ব্যবস্থা এবং অজন্মা সত্ত্বেও অব্যাহত শস্য-রপ্তানিই অধিকতর দায়ী। এই সময়ে ভারতের ৪০ লাখ টন শস্য ঘাটতি সত্ত্বেও ১০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করা হয়।
শস্যের দর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি যুদ্ধপূর্ব স্তরের দশগুণের ওপরে পৌঁছায়। এই দরবৃদ্ধির প্রথম বলি ছিল গ্রামের গরিবসহ ভারতীয় সমাজের দরিদ্র মানুষেরা। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের ব্যাপক দারিদ্র ছিল মহাজনদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণগ্রহণ এবং প্রচুর জমিজমা মহাজন ও জমিদারদের কুক্ষিগত হওয়ারই নামান্তর। সুবিধাবাদীরা ও চোরাকারবারিরা ইচ্ছেমতো নিজেদের সাম্রাজ্য তৈরি করে নেয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর মানুষের সৃষ্টি করা সংকটের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে মানবতা। এই মন্বন্তরে প্রাণ হারায় ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। দুর্ভিক্ষের কবলগ্রস্ত হওয়ায় কৃষক-আন্দোলনে মন্দাভাব দেখা দেয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চল, তামিলনাড়– ও কেরালা এই সময়ে কৃষক-আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সেকালে এবং পরবর্তীকালে বাংলায় কৃষক-আন্দোলন নতুন পথে অগ্রসর হতে থাকে। কৃষকরা জমিদারদের পতিত জমি চাষ করতে থাকে এবং তাদের শস্যগোলা দখল করে নেয়। একথা স্মরণীয় যে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে আইনসম্মত করার আনুষঙ্গিক ঘটনাবলির দ্বারা গণআন্দোলনের বিকাশ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
বিজন ভট্টাচার্য ছাত্রাবস্থাতেই যুক্ত হন স্বদেশি আন্দোলনে। দ্বিতীয় সূচিত বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পর তাঁর মাতুল প্রখ্যাত সাংবাদিক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার কর্তৃক অরণি পত্রিকা প্রকাশিত হলে শুরু হয় সেখানে তাঁর গল্প লেখা। সমকালেই খ্যাতিমান মার্কসবাদী রেবতী বর্মণের লেখা পড়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। আনন্দবাজার পত্রিকায় রেবতী বর্মণের লেখার সমালোচনা লেখেন এবং সংস্পর্শে আসেন কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহমদের। ১৯৪২-৪৩ সালে সদস্যপদ লাভ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির। ১৯৪৪ সালে আনন্দবাজারের চাকরি ছেড়ে পার্টির হোলটাইমার হন।
তাঁর ব্যক্তিজীবনের কর্মধারার খানিকটা তুলে ধরতেই হলো, কারণ ব্যক্তিচরিত্রের অনেক কিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটে সৃষ্টির মধ্যে। আর বিজন ভট্টাচার্যও তাঁর চরিত্রের বাইরে যাননি। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা ছিল তাঁর প্রখর। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন সংবেদনশীল মানুষ আর এই সংবেদনশীল মানসিকতার ফসল হলো তাঁর নবান্ন নাটক।
নবান্নের প্লট সম্পর্কে নাট্যকার নিজেই বলেছেন – ‘একদিন ফেরার পথে কানে এলো, পার্কের
১৯৪৩ ও ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অনেকগুলো অঞ্চলে অজন্মার কারণে খাদ্যাভাব এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার কোনো কোনো অঞ্চলে এই অবস্থা মারাত্মক হয়ে ওঠে। ১৯৪৩-৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের জন্যে স্থানীয় উৎপাদন-ঘাটতি অপেক্ষা ব্রিটিশ প্রশাসনের দুর্বল বণ্টন-ব্যবস্থা এবং অজন্মা সত্ত্বেও অব্যাহত শস্য-রপ্তানিই অধিকতর দায়ী। এই সময়ে ভারতের ৪০ লাখ টন শস্য ঘাটতি সত্ত্বেও ১০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করা হয়।
শস্যের দর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি যুদ্ধপূর্ব স্তরের দশগুণের ওপরে পৌঁছায়। এই দরবৃদ্ধির প্রথম বলি ছিল গ্রামের গরিবসহ ভারতীয় সমাজের দরিদ্র মানুষেরা। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের ব্যাপক দারিদ্র ছিল মহাজনদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণগ্রহণ এবং প্রচুর জমিজমা মহাজন ও জমিদারদের কুক্ষিগত হওয়ারই নামান্তর। সুবিধাবাদীরা ও চোরাকারবারিরা ইচ্ছেমতো নিজেদের সাম্রাজ্য তৈরি করে নেয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর মানুষের সৃষ্টি করা সংকটের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে মানবতা। এই মন্বন্তরে প্রাণ হারায় ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। দুর্ভিক্ষের কবলগ্রস্ত হওয়ায় কৃষক-আন্দোলনে মন্দাভাব দেখা দেয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চল, তামিলনাড়– ও কেরালা এই সময়ে কৃষক-আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সেকালে এবং পরবর্তীকালে বাংলায় কৃষক-আন্দোলন নতুন পথে অগ্রসর হতে থাকে। কৃষকরা জমিদারদের পতিত জমি চাষ করতে থাকে এবং তাদের শস্যগোলা দখল করে নেয়। একথা স্মরণীয় যে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে আইনসম্মত করার আনুষঙ্গিক ঘটনাবলির দ্বারা গণআন্দোলনের বিকাশ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
বিজন ভট্টাচার্য ছাত্রাবস্থাতেই যুক্ত হন স্বদেশি আন্দোলনে। দ্বিতীয় সূচিত বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পর তাঁর মাতুল প্রখ্যাত সাংবাদিক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার কর্তৃক অরণি পত্রিকা প্রকাশিত হলে শুরু হয় সেখানে তাঁর গল্প লেখা। সমকালেই খ্যাতিমান মার্কসবাদী রেবতী বর্মণের লেখা পড়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। আনন্দবাজার পত্রিকায় রেবতী বর্মণের লেখার সমালোচনা লেখেন এবং সংস্পর্শে আসেন কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহমদের। ১৯৪২-৪৩ সালে সদস্যপদ লাভ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির। ১৯৪৪ সালে আনন্দবাজারের চাকরি ছেড়ে পার্টির হোলটাইমার হন।
তাঁর ব্যক্তিজীবনের কর্মধারার খানিকটা তুলে ধরতেই হলো, কারণ ব্যক্তিচরিত্রের অনেক কিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটে সৃষ্টির মধ্যে। আর বিজন ভট্টাচার্যও তাঁর চরিত্রের বাইরে যাননি। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা ছিল তাঁর প্রখর। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন সংবেদনশীল মানুষ আর এই সংবেদনশীল মানসিকতার ফসল হলো তাঁর নবান্ন নাটক।
নবান্নের প্লট সম্পর্কে নাট্যকার নিজেই বলেছেন – ‘একদিন ফেরার পথে কানে এলো, পার্কের
রেলিঙের ধারে বসে এক পুরুষ আর এক নারী তাদের ছেড়ে আসা গ্রামের গল্প করছে,
নবান্নের গল্প,
পুজো-পার্বণের গল্প। ভাববার চেষ্টা করছে তাদের অবর্তমানে গ্রামে তখন কি হচ্ছে?’
তাঁর অভিজ্ঞতার ভেতর থেকেই এই নাট্যরূপ উঠে এসেছিল। ‘যে মানুষেরা রাস্তায় দুর্ভিক্ষের মড়া দেখে মুখ ফিরিয়ে গেছে ‘নবান্ন’ নাটক দেখিয়ে সেই মানুষদের চোখে আমরা জল ঝরাতে পেরেছি – এটা ছিল আমাদের কৃতিত্ব।
তখন নবান্ন নাটক সৃষ্টি হয়েছিল একটি বিশেষ সময়কে নিয়ে একথা অনস্বীকার্য। নাট্যকার যদিও বলেছেন – ‘নবান্ন যখন প্রযোজিত হয় তখন সে নাটক আমি দেশের কথা ভেবেই লিখেছিলাম, কোনো দলীয় রাজনীতি বা বিশেষ মতবাদে প্রভাবিত হয়ে নয়।’ তা-ই ধরে নিলাম। কিন্তু মানুষের আদর্শের শেকড় বহুদূর বিস্তৃত। সে যে যেভাবেই দেখুক না কেন। মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠে সমাজ, তাই পরোক্ষভাবে হলেও সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মানবতার অবমাননা যেখানে সেখানেই মানুষের কণ্ঠ সোচ্চার হওয়া উচিত আর সত্যিকারের যারা মানুষ তারা মানবতার অবমাননা কোনোমতেই সহ্য করতে পারে না। কখনো কণ্ঠ, কখনো কলম হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার। মানবিক অবক্ষয় মানুষের মনে করে বেদনার সঞ্চার আর সেই বেদনা থেকে বেরিয়ে আসে প্রতিবাদী সৃষ্টি। আর সেটা তখন কোনো অরাজনৈতিক বিষয় থাকে না। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণচিন্তাও বেরিয়ে আসে রাজনৈতিক চেতনা থেকে। সে-রাজনীতিতে আছে বেঁচে থাকার লড়াই, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা। সুখী সমাজ গড়ার স্বপ্ন থাকলেই শ্রেণিসংগ্রামের কথা আসে আর সেখানে ব্যক্তির ভাবনা ব্যক্তিগত থাকে না, সেটা হয়ে ওঠে সামগ্রিক, যেটা রাজনীতির মধ্যেই পড়ে। বিজন ভট্টাচার্যের নাটকের ভেতর সাম্যবাদী যে-চেতনা পরিলক্ষিত হয় তা থেকেই বোঝা যায়, তাঁর চিন্তা ও মননে রাজনীতি কেমনভাবে জড়িয়ে ছিল। সংগ্রামের কথা বলতে গেলে চাই একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম আর সেই প্লাটফর্ম করতে গেলে প্রশ্ন আসে দলীয় রাজনীতির। দলীয় রাজনীতি ছাড়া সংগ্রাম সম্ভব নয়। আর নাট্যকারের জীবন থেকে যতটুকু ছবি পাওয়া যায় তাতে তিনি অবশ্যই জড়িয়ে ছিলেন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে। আর তিলতিল করে দেখা তাঁকে নবান্ন নাটকের ছবি আঁকতে সাহায্য করেছে। তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষাপট যখন তাঁকে নবান্ন নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তখনো তিনি দলীয় রাজনীতির বাইরে অবস্থান করছিলেন না।
১৯৪৩ সালের ২৩ এপ্রিল অরণি পত্রিকায় আগুন প্রকাশিত হয়েছিল। নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৯৪৩-এর মে মাসে নাট্য ভারতী হলে (অধুনা প্রেস সিনেমা)। এই নাটক লেখার পেছনে তৎপরতা ছিল তখনকার ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক সংঘের কমিউনিস্ট নেতৃত্বের।
কিন্তু নবান্ন নাটকের পরিপ্রেক্ষিতটাই তাঁর সবচেয়ে ভিন্ন ধরনের। আগস্ট আন্দোলনে নাট্যকারের অংশগ্রহণ, প্রতি পদক্ষেপেই মৃত্যুর ইশারা, দেশজুড়ে কান্নার রোল – কারো স্বজন নেই, কারো অন্ন নেই, ভুখা মিছিলের আর্তনাদ নাট্যকারের জীবনকে করেছিল বিস্বাদ। বাড়িতে দরজা বন্ধ করে তিনি খেতে বসতেন, অন্ন উঠত না মুখে, একটু ফেনের জন্য রান্নাঘরের ড্রেনে ভিক্ষাপাত্র ধরত বুভুক্ষ মানুষের দল। ওই নব অসহায় মানুষের বোবাদৃষ্টি আর ক্ষুধার চিৎকার নাট্যকারকে করে তুলেছিল অস্থির ও মর্মাহত। নবান্নের আগে আরো দুটি নাটক তিনি রচনা করেছিলেন; কিন্তু নবান্ন নাটকই দিকচিহ্নের সাক্ষ্য বহন করছে বলা যায়।
তাঁর এই সৃষ্টিকে স্মরণীয় করে রাখতে এগিয়ে এসেছিলেন নবান্ন নাটকের চরিত্রগুলোতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা এবং কলাকুশলীরা, অনেক কর্মী, অনেক উদ্যোগ, প্রগতি শিল্পী সংঘের উৎসাহ।
দুর্ভিক্ষের আর্তচিৎকার মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল বিবেকমান মানুষের, কিন্তু প্রকাশ করার ভাষা তো সবার জানা থাকে না। নাট্যকার লেখনীর ফ্রেমে ধরে সচেতন মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করলেন। ভেতরের তাগিদ থেকে ঘর ছেড়ে অনেকে বাইরে দাঁড়ালেন তাঁর নবান্ন নাটক সফল করার জন্যে। ব্রিটিশ সরকারের অগণতান্ত্রিক জাঁতাকলের চাপে অনেক খোলাখুলি কথা হয়তো বলা হয়নি, যে কারণে কোথাও কোথাও নাটকের স্বাভাবিক রস ক্ষুণœ হয়েছে; কিন্তু অনিচ্ছাকৃত অসংগতি বাদ দিলে দেশকালের সাক্ষ্য বহন করতে সমর্থ হয়েছে নবান্ন নাটক। আর এ-নাটক সার্থক করে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সেদিন বিখ্যাত অভিনেতা শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি ভাদুড়ী (মিত্র), চারুপ্রকাশ ঘোষ, সজল রায় চৌধুরী, সুধা প্রধান, গঙ্গাপদ বসু, শোভা সেন, মণিকুন্তলা সেন প্রমুখ। যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সমাজ-সচেতন মানুষ। কারণ গভীর অন্তর্দৃষ্টি না থাকলে অভিনয়কে বাস্তবমুখী করে তোলা সম্ভব নয়। আরো বিশেষ করে দেখতে হবে, কোন সময়ে নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে। যেখানে নাট্যকার সরকার-নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে বুঝতে দিতে চাননি পোড়া বাঁশের শব্দকে গুলির আওয়াজ বলে চালানো হচ্ছে। পুলিশ ভাবছে, পোড়া বাঁশের কট্কট্ শব্দ। নাটকের একটি দৃশ্যে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা আছে আর সেই গুলির আওয়াজ সৃষ্টি করা হয়েছে পোড়া বাঁশের শব্দের মাধ্যমে। বোকা পুলিশ বুঝতে পারেনি। সেদিন ঘোলাটে সময়ে প্রতিটি চরিত্রই একাত্মতা ঘোষণা করেছিল অভিনয়শিল্পের মধ্যে দিয়ে এই নবান্নের কাহিনির মধ্যে। সেই চরিত্রগুলো আজ ভূখণ্ডের বুকে দাঁড়িয়ে, তারা সকলে একই ভাবধারা পোষণ করেছে অর্থাৎ সকলের চোখেই স্বাধীন ভারতের স্বপ্নের আলো ছিল আর সে-কারণেই একেকজন হয়ে উঠেছিল নাটকের চরিত্রে কালের সাক্ষী। রোগা শরীর নিয়ে সাহিত্যিক স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য ভিখারির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বাস্তবসম্মত। সে-প্রসঙ্গে নাট্যকার নিজেই বলেছেন – ‘তা ভোলবার নয়।’ মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য চট দিয়ে মঞ্চ পরিকল্পনার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে এক অসাধারণ অভিনবত্ব এনে দিয়েছিলেন মঞ্চে। কারণ অল্প ব্যয়ে এর চেয়ে ভালো পরিকল্পনা আর কী হতে পারে! সকলেই সাড়া দিয়েছিলেন সেদিন কাজ করার মানসিকতা নিয়ে। এটা অবশ্যই লক্ষণীয় বিষয় যে, সেই অস্থির সময়টাতে সকলেই কিছু করার জন্যে প্লাটফর্ম খুঁজে নিয়েছিলেন।
অরুণ মিত্রের নবান্ন-স্মৃতির কিছুটা এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। কারণ সামগ্রিক চিত্রটা আরো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। ‘এইভাবে চলতে চলতে হঠাৎ দেখি আমরা সবাই মিলে উপস্থিত হয়েছি ধর্মতলা স্ট্রিটের ওপরতলার একটা ঘরে। সেটা ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের কেন্দ্র। তখন যুদ্ধ চলছিল, তার মধ্যেই দেখা দিলো মন্বন্তর। এই অবস্থার নাড়া আমাদের আড্ডাখানাতেও লেগেছিল। দেশ, পৃথিবী, জনসাধারণ সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকের ভাবনা যেন এক বৃহৎ অঙ্গ পেল। লেখা, গান, ছবি, অভিনয় – এ সবই নিজের নিজের আলাদা কাজ, কিন্তু তা চারপাশের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন নয় এবং মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব অন্তর্নিহিত।’
আরো বললেন – ‘আমি থিয়েটারের লোক কখনো ছিলাম না। তার কলাকৌশল নিয়ে মাথা ঘামানোর তাগিদ আমি অনুভব করি না। আমার স্বভাবের বহু ঘাটতির মধ্যে এটা একটা। কারো কারো কথা বলা শুনেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই, নাটক দেখবার মত তারিফ করতে ইচ্ছে করে। Berliner Ensemble-এর কীর্তি কলাপ আমি দেখিনি, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে-যায় না, কারণ ইৎবপযঃ-এর নাটক পড়েই আমি অভিভূত হই। তবু আমি কিশোর বয়স থেকে অভিনয় দেখে আসছি এবং অসাধারণ অভিনয় কতবার যে আমাকে তছনছ করেছে তার ঠিক নেই। কিন্তু একথাটা বাইরে থেকে, থিয়েটারের ভিতরের ব্যাপার আমার কাছে বরাবরই সুদূর। সুতরাং শম্ভু মিত্র বা বিজন ভট্টাচার্য থিয়েটারের পদ্ধতিকরণে কি যুগান্তর আনলেন তা আলোচনা করার সাধ্য আমার নেই, সাধও নেই। তাঁদের বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে তাঁরা যে আমার সঙ্গে এক প্রবাহে রয়েছেন, এটাই ছিল আমার কাছে প্রধান।’ অরুণ মিত্রের এই মন্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, যুগ উদ্দীপ্ত করেছিল নাট্যকারকে আর নাট্যকার উদ্দীপ্ত করেছিলেন মঞ্চের ভেতর ও বাইরের এবং জাতীয়তাবোধসম্পন্ন জনসাধারণকে।
নবান্নের সংলাপের মধ্যে সরল ও স্বাভাবিকতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আমিনপুর ছিল মোদিনীপুরের ছদ্মনাম – তা হলেও মেদিনীপুরের উপভাষা ব্যবহার করেননি নাট্যকার। কারণ স্বভাববাদী প্রকরণে চরিত্রগুলোর সঙ্গে দর্শকদের একাত্মতা ব্যাহত হতো। তাই সহজবোধ্যতার জন্যে তিনি একটি মিশ্র-গ্রামীণ ভাষার ব্যবহার করেছেন, যা যশোর ও খুলনার ভাষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ একটি মিশ্র-গ্রামীণ ভাষা যা কিনা চলতি ভাষার রূপ বহন করে এবং তা দর্শকদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। তিনি চাষিদের মুখে এই ভাষা লাগিয়েছিলেন আর তাই সেখানে কোনো কৃত্রিম ভাষার অবতারণা ঘটেনি।
নবান্ন নাটকের সংলাপের স্বাভাবিকতার আশ্রয় তার আঞ্চলিকতা নয়, সে-আশ্রয় তার বাক্যের গঠন, শব্দের চরিত্র ও বিন্যাসে, তার বাগ্-ব্যবহারের প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে চাষিদের সংলাপের কথাই ধরা যাক। লক্ষ করি, তারা মূলত ছোট্ট ছোট্ট বাক্যে নিজেদের মনের কথা ব্যক্ত বা
তখন নবান্ন নাটক সৃষ্টি হয়েছিল একটি বিশেষ সময়কে নিয়ে একথা অনস্বীকার্য। নাট্যকার যদিও বলেছেন – ‘নবান্ন যখন প্রযোজিত হয় তখন সে নাটক আমি দেশের কথা ভেবেই লিখেছিলাম, কোনো দলীয় রাজনীতি বা বিশেষ মতবাদে প্রভাবিত হয়ে নয়।’ তা-ই ধরে নিলাম। কিন্তু মানুষের আদর্শের শেকড় বহুদূর বিস্তৃত। সে যে যেভাবেই দেখুক না কেন। মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠে সমাজ, তাই পরোক্ষভাবে হলেও সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মানবতার অবমাননা যেখানে সেখানেই মানুষের কণ্ঠ সোচ্চার হওয়া উচিত আর সত্যিকারের যারা মানুষ তারা মানবতার অবমাননা কোনোমতেই সহ্য করতে পারে না। কখনো কণ্ঠ, কখনো কলম হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার। মানবিক অবক্ষয় মানুষের মনে করে বেদনার সঞ্চার আর সেই বেদনা থেকে বেরিয়ে আসে প্রতিবাদী সৃষ্টি। আর সেটা তখন কোনো অরাজনৈতিক বিষয় থাকে না। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণচিন্তাও বেরিয়ে আসে রাজনৈতিক চেতনা থেকে। সে-রাজনীতিতে আছে বেঁচে থাকার লড়াই, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা। সুখী সমাজ গড়ার স্বপ্ন থাকলেই শ্রেণিসংগ্রামের কথা আসে আর সেখানে ব্যক্তির ভাবনা ব্যক্তিগত থাকে না, সেটা হয়ে ওঠে সামগ্রিক, যেটা রাজনীতির মধ্যেই পড়ে। বিজন ভট্টাচার্যের নাটকের ভেতর সাম্যবাদী যে-চেতনা পরিলক্ষিত হয় তা থেকেই বোঝা যায়, তাঁর চিন্তা ও মননে রাজনীতি কেমনভাবে জড়িয়ে ছিল। সংগ্রামের কথা বলতে গেলে চাই একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম আর সেই প্লাটফর্ম করতে গেলে প্রশ্ন আসে দলীয় রাজনীতির। দলীয় রাজনীতি ছাড়া সংগ্রাম সম্ভব নয়। আর নাট্যকারের জীবন থেকে যতটুকু ছবি পাওয়া যায় তাতে তিনি অবশ্যই জড়িয়ে ছিলেন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে। আর তিলতিল করে দেখা তাঁকে নবান্ন নাটকের ছবি আঁকতে সাহায্য করেছে। তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষাপট যখন তাঁকে নবান্ন নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তখনো তিনি দলীয় রাজনীতির বাইরে অবস্থান করছিলেন না।
১৯৪৩ সালের ২৩ এপ্রিল অরণি পত্রিকায় আগুন প্রকাশিত হয়েছিল। নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৯৪৩-এর মে মাসে নাট্য ভারতী হলে (অধুনা প্রেস সিনেমা)। এই নাটক লেখার পেছনে তৎপরতা ছিল তখনকার ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক সংঘের কমিউনিস্ট নেতৃত্বের।
কিন্তু নবান্ন নাটকের পরিপ্রেক্ষিতটাই তাঁর সবচেয়ে ভিন্ন ধরনের। আগস্ট আন্দোলনে নাট্যকারের অংশগ্রহণ, প্রতি পদক্ষেপেই মৃত্যুর ইশারা, দেশজুড়ে কান্নার রোল – কারো স্বজন নেই, কারো অন্ন নেই, ভুখা মিছিলের আর্তনাদ নাট্যকারের জীবনকে করেছিল বিস্বাদ। বাড়িতে দরজা বন্ধ করে তিনি খেতে বসতেন, অন্ন উঠত না মুখে, একটু ফেনের জন্য রান্নাঘরের ড্রেনে ভিক্ষাপাত্র ধরত বুভুক্ষ মানুষের দল। ওই নব অসহায় মানুষের বোবাদৃষ্টি আর ক্ষুধার চিৎকার নাট্যকারকে করে তুলেছিল অস্থির ও মর্মাহত। নবান্নের আগে আরো দুটি নাটক তিনি রচনা করেছিলেন; কিন্তু নবান্ন নাটকই দিকচিহ্নের সাক্ষ্য বহন করছে বলা যায়।
তাঁর এই সৃষ্টিকে স্মরণীয় করে রাখতে এগিয়ে এসেছিলেন নবান্ন নাটকের চরিত্রগুলোতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা এবং কলাকুশলীরা, অনেক কর্মী, অনেক উদ্যোগ, প্রগতি শিল্পী সংঘের উৎসাহ।
দুর্ভিক্ষের আর্তচিৎকার মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল বিবেকমান মানুষের, কিন্তু প্রকাশ করার ভাষা তো সবার জানা থাকে না। নাট্যকার লেখনীর ফ্রেমে ধরে সচেতন মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করলেন। ভেতরের তাগিদ থেকে ঘর ছেড়ে অনেকে বাইরে দাঁড়ালেন তাঁর নবান্ন নাটক সফল করার জন্যে। ব্রিটিশ সরকারের অগণতান্ত্রিক জাঁতাকলের চাপে অনেক খোলাখুলি কথা হয়তো বলা হয়নি, যে কারণে কোথাও কোথাও নাটকের স্বাভাবিক রস ক্ষুণœ হয়েছে; কিন্তু অনিচ্ছাকৃত অসংগতি বাদ দিলে দেশকালের সাক্ষ্য বহন করতে সমর্থ হয়েছে নবান্ন নাটক। আর এ-নাটক সার্থক করে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সেদিন বিখ্যাত অভিনেতা শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি ভাদুড়ী (মিত্র), চারুপ্রকাশ ঘোষ, সজল রায় চৌধুরী, সুধা প্রধান, গঙ্গাপদ বসু, শোভা সেন, মণিকুন্তলা সেন প্রমুখ। যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সমাজ-সচেতন মানুষ। কারণ গভীর অন্তর্দৃষ্টি না থাকলে অভিনয়কে বাস্তবমুখী করে তোলা সম্ভব নয়। আরো বিশেষ করে দেখতে হবে, কোন সময়ে নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে। যেখানে নাট্যকার সরকার-নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে বুঝতে দিতে চাননি পোড়া বাঁশের শব্দকে গুলির আওয়াজ বলে চালানো হচ্ছে। পুলিশ ভাবছে, পোড়া বাঁশের কট্কট্ শব্দ। নাটকের একটি দৃশ্যে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা আছে আর সেই গুলির আওয়াজ সৃষ্টি করা হয়েছে পোড়া বাঁশের শব্দের মাধ্যমে। বোকা পুলিশ বুঝতে পারেনি। সেদিন ঘোলাটে সময়ে প্রতিটি চরিত্রই একাত্মতা ঘোষণা করেছিল অভিনয়শিল্পের মধ্যে দিয়ে এই নবান্নের কাহিনির মধ্যে। সেই চরিত্রগুলো আজ ভূখণ্ডের বুকে দাঁড়িয়ে, তারা সকলে একই ভাবধারা পোষণ করেছে অর্থাৎ সকলের চোখেই স্বাধীন ভারতের স্বপ্নের আলো ছিল আর সে-কারণেই একেকজন হয়ে উঠেছিল নাটকের চরিত্রে কালের সাক্ষী। রোগা শরীর নিয়ে সাহিত্যিক স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য ভিখারির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বাস্তবসম্মত। সে-প্রসঙ্গে নাট্যকার নিজেই বলেছেন – ‘তা ভোলবার নয়।’ মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য চট দিয়ে মঞ্চ পরিকল্পনার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে এক অসাধারণ অভিনবত্ব এনে দিয়েছিলেন মঞ্চে। কারণ অল্প ব্যয়ে এর চেয়ে ভালো পরিকল্পনা আর কী হতে পারে! সকলেই সাড়া দিয়েছিলেন সেদিন কাজ করার মানসিকতা নিয়ে। এটা অবশ্যই লক্ষণীয় বিষয় যে, সেই অস্থির সময়টাতে সকলেই কিছু করার জন্যে প্লাটফর্ম খুঁজে নিয়েছিলেন।
অরুণ মিত্রের নবান্ন-স্মৃতির কিছুটা এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। কারণ সামগ্রিক চিত্রটা আরো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। ‘এইভাবে চলতে চলতে হঠাৎ দেখি আমরা সবাই মিলে উপস্থিত হয়েছি ধর্মতলা স্ট্রিটের ওপরতলার একটা ঘরে। সেটা ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের কেন্দ্র। তখন যুদ্ধ চলছিল, তার মধ্যেই দেখা দিলো মন্বন্তর। এই অবস্থার নাড়া আমাদের আড্ডাখানাতেও লেগেছিল। দেশ, পৃথিবী, জনসাধারণ সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকের ভাবনা যেন এক বৃহৎ অঙ্গ পেল। লেখা, গান, ছবি, অভিনয় – এ সবই নিজের নিজের আলাদা কাজ, কিন্তু তা চারপাশের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন নয় এবং মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব অন্তর্নিহিত।’
আরো বললেন – ‘আমি থিয়েটারের লোক কখনো ছিলাম না। তার কলাকৌশল নিয়ে মাথা ঘামানোর তাগিদ আমি অনুভব করি না। আমার স্বভাবের বহু ঘাটতির মধ্যে এটা একটা। কারো কারো কথা বলা শুনেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই, নাটক দেখবার মত তারিফ করতে ইচ্ছে করে। Berliner Ensemble-এর কীর্তি কলাপ আমি দেখিনি, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে-যায় না, কারণ ইৎবপযঃ-এর নাটক পড়েই আমি অভিভূত হই। তবু আমি কিশোর বয়স থেকে অভিনয় দেখে আসছি এবং অসাধারণ অভিনয় কতবার যে আমাকে তছনছ করেছে তার ঠিক নেই। কিন্তু একথাটা বাইরে থেকে, থিয়েটারের ভিতরের ব্যাপার আমার কাছে বরাবরই সুদূর। সুতরাং শম্ভু মিত্র বা বিজন ভট্টাচার্য থিয়েটারের পদ্ধতিকরণে কি যুগান্তর আনলেন তা আলোচনা করার সাধ্য আমার নেই, সাধও নেই। তাঁদের বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে তাঁরা যে আমার সঙ্গে এক প্রবাহে রয়েছেন, এটাই ছিল আমার কাছে প্রধান।’ অরুণ মিত্রের এই মন্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, যুগ উদ্দীপ্ত করেছিল নাট্যকারকে আর নাট্যকার উদ্দীপ্ত করেছিলেন মঞ্চের ভেতর ও বাইরের এবং জাতীয়তাবোধসম্পন্ন জনসাধারণকে।
নবান্নের সংলাপের মধ্যে সরল ও স্বাভাবিকতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আমিনপুর ছিল মোদিনীপুরের ছদ্মনাম – তা হলেও মেদিনীপুরের উপভাষা ব্যবহার করেননি নাট্যকার। কারণ স্বভাববাদী প্রকরণে চরিত্রগুলোর সঙ্গে দর্শকদের একাত্মতা ব্যাহত হতো। তাই সহজবোধ্যতার জন্যে তিনি একটি মিশ্র-গ্রামীণ ভাষার ব্যবহার করেছেন, যা যশোর ও খুলনার ভাষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ একটি মিশ্র-গ্রামীণ ভাষা যা কিনা চলতি ভাষার রূপ বহন করে এবং তা দর্শকদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। তিনি চাষিদের মুখে এই ভাষা লাগিয়েছিলেন আর তাই সেখানে কোনো কৃত্রিম ভাষার অবতারণা ঘটেনি।
নবান্ন নাটকের সংলাপের স্বাভাবিকতার আশ্রয় তার আঞ্চলিকতা নয়, সে-আশ্রয় তার বাক্যের গঠন, শব্দের চরিত্র ও বিন্যাসে, তার বাগ্-ব্যবহারের প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে চাষিদের সংলাপের কথাই ধরা যাক। লক্ষ করি, তারা মূলত ছোট্ট ছোট্ট বাক্যে নিজেদের মনের কথা ব্যক্ত বা
প্রকাশ করে,
সেই বাক্যগুলোর মধ্যেই মনোলগধর্মী সংগতি ও নাটকীয়তা তৈরি হয়,
আর কথাগুলোকে দুবার-দুবার করে বলে তারা নিজেদের আবেগাপ্লুত মনোভাবকে প্রবলভাবে প্রকাশ করতে চায় অন্যদের কাছে,
যেন নিজেদের প্রকাশক্ষমতায় তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস নেই,
যেন অন্যেরা তাদের কথায় যথেষ্ট মনোযোগী নয়,
অভিব্যক্তির জন্যে একটি তীব্র ব্যাকুলতাই যেন তাদের পুনরুক্তি করতে বাধ্য করে।
No comments