উপন্যাসঃ তিতাস একটি নদীর নাম। লেখক - ( অদ্বৈত মল্লবর্মণ) রিভিও
➤ভিডিও লিংক https://www.youtube.com/watch?v=1Mku90VzJ0s#action=share
তিতাস একটি নদীর নাম অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। এই একটি উপন্যাস লিখে লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মালো শ্রেণীর লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়েছিল। কয়েকটি অধ্যায় মোহাম্মদীতে মুদ্রিত হবার পর উপন্যাসটির মূল পাণ্ডুলিপি রাস্তায় খোঁয়া যায়। বন্ধু-বান্ধব ও অত্যাগ্রহী পাঠকদের আন্তরিক অনুরোধে তিনি পুনরায় কাহিনীটি লেখেন। কাঁচড়াপাড়া হাসপাতালে ভর্তির আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে যান। অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামের এই উপন্যাসটি প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের কাহিনীকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রস্রষ্টা ঋত্বিক কুমার ঘটক ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহের কারণ হিসেবে ঋত্বিক ঘটক বলেন:
তিতাস পূর্ব বাংলার একটা খণ্ডজীবন, এটি একটি সৎ লেখা। ইদানীং সচরাচর বাংলাদেশে (দুই বাংলাতেই) এ রকম লেখার দেখা পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আছে প্রচুর নাটকীয় উপাদান, আছে দর্শনধারী ঘটনাবলী, আছে শ্রোতব্য বহু প্রাচীন সঙ্গীতের টুকরো - সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ ও অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করা যায়। ব্যাপারটা ছবিতে ধরা পড়ার জন্য জন্ম থেকেই কাঁদছিল। ... অদ্বৈতবাবু অনেক অতিকথন করেন। কিন্তু লেখাটা একেবারে প্রাণ থেকে, ভেতর থেকে লেখা। আমি নিজেও বাবুর চোখ দিয়ে না দেখে ওইভাবে ভেতর থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। অদ্বৈতবাবু যে সময়ে তিতাস নদী দেখেছেন, তখন তিতাস ও তার তীরবর্তী গ্রামীণ সভ্যতা মরতে বসেছে। বইয়ে তিতাস একটি নদীর নাম। তিনি এর পরের পুণর্জীবনটা দেখতে যাননি। আমি দেখাতে চাই যে, মৃত্যুর পরেও এই পুণর্জীবন হচ্ছে। তিতাস এখন আবার যৌবনবতী। আমার ছবিতে গ্রাম নায়ক, তিতাস নায়িকা।
তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ এ কথাগুলো ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের শুরুতে লিখেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। বাংলা সাহিত্যে নদীকেন্দ্রিক উপন্যাসের মধ্যে নিম্নবর্গ মানুষের আখ্যানসমৃদ্ধ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অমরকীর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। নদী অববাহিকায় বসবাসরত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ উপন্যাসে। ‘ধীবর’ বা ‘মালো’ সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে অদ্বৈত মল্লবর্মণ গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে দেখেছেন এ সমাজের জীবনসংগ্রামের নিষ্ঠুর চিত্র। বলা যায়, প্রতিকূল সংঘাতে ক্রমে মুছে আসা ‘মালো’ জীবনের সারাৎসার তিনি আঁকতে সক্ষম হয়েছেন এ উপন্যাসে।
বিশ শতকের বাংলা উপন্যাসে যে দুটি ধারা বহমান তার একটি হচ্ছে ‘নিম্নবর্গ মানুষের আখ্যান’। একটু পেছন ফিরলে দেখা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘কল্লোল’ (১৯২৩) গোষ্ঠীর কথাসাহিত্যিকরা তাদের লেখায় নিম্নবর্গের জীবন তুলে ধরতে সচেতন হন। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখের রচনায় নিম্নবর্গের মানুষের জীবন রূপায়ণে অভিজ্ঞতাপ্রসূত ধারার সূচনা ঘটে। তবে কথাসাহিত্যে নিম্নবর্গের জীবনবৈচিত্র্য রূপায়ণে তিন বন্দ্যোপাধ্যায় মানিক, তারাশঙ্কর ও বিভূতিভূষণের দক্ষতা অপরিসীম। গবেষক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীর পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সাহিত্যকর্ম হয়ে ওঠে নবতর সমাজভাবনার শিল্পমণ্ডিত রূপ। সামাজিকভাবে নিচু কিংবা যারা উচ্চবর্গের কাছে অপ্রধান জনগোষ্ঠী, তাদের জীবনের বাস্তবতা, জৈবপ্রবৃত্তি, নর-নারী সম্পর্কে প্রচলিত নীতিশাসন বহির্ভূত আচরণ, উচ্চবর্গের শোষণ-শাসন ও এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, জীবনাচার, সংস্কার ও জীবনযাপনের রীতি-পদ্ধতির সম্যক উন্মোচন লক্ষ্য করা যায় এসব উপন্যাসে।’ বলা যায়, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে নিম্নবর্গের আখ্যান তুলে ধরা এ ধারাবাহিকতারই অংশ।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের বিষয়বস্তু নির্বাচন, চরিত্র-চিত্রণ এবং প্রকাশভঙ্গিগত কারণে এ উপন্যাসের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবনীকার অধ্যাপক শান্তনু কায়সারের মতে, ‘তিতাস জীবনের শেকড় প্রাকৃত জীবনের গভীরে প্রোথিত। এ প্রাকৃত জীবনকে বাইরে থেকে যতই সরল দেখাক, এর ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে, তা বহু ভঙ্গিমা বৈচিত্র্যের অধিকারী। সারল্যের মধ্য দিয়ে এ বৈচিত্র্যর অনুসন্ধান করেছে ঔপন্যাসিক ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে। ফলে নদীকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের উপাদানগুলোর মধ্যে অন্য যে উপন্যাসটি প্রাকৃত জীবনকে ধারণ করেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত সেই ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র সঙ্গে তুলনা করলেও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসটি অনন্য হয়ে ওঠে।’ অস্বীকার করা যাবে না, নদী অববাহিকায় বসবাসরত ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ ধরে নৌকা বেয়ে জীবন অতিবাহিত করে। জীবন জীবিকার জন্য এ শ্রেণির মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করলেও প্রাচুর্যের মুখ কখনো দেখে না। অভাব-অনটন আর তাদের জীবন যেন একই সুতোয় গাঁথা। তবু এ দুঃখ দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনে আসে প্রেম-ভালোবাসা। সেখানেও নিরবচ্ছিন্ন সুখ মেলে না। সংসার জীবন কাটে দুঃখ দারিদ্র্যে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ সেই দৈন্যপীড়িত মানুষের মুখ এঁকেছেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে। এ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে – মৎস্যজীবীদের জীবন কষ্টের হলেও নির্বিঘœ নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে এক সময় নদীতে চর পড়ে। নদী তার যৌবন হারায়। সেই সঙ্গে শেষ হয় নদীর মাছ ও জলের তরঙ্গ। নিরুপায় জেলেরা বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের যুগ-যুগান্তরের আবাস ছেড়ে জীবিকা অন্বেষণে অন্যত্র পাড়ি জমায়। আবার কেউ উপায়ন্তর না পেয়ে সেখানেই থেকে যায়। তখন তাদের দুঃখের সীমা আরো দীর্ঘায়িত হয়। এ যেন এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। অসহায় তিতাস পারের এসব দরিদ্র মানুষের দীর্ঘশ্বাস চিত্রিত হয়েছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে।
এ উপন্যাসের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে তিতাশ চৌধুরী তার ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “পৃথিবীর সাহিত্যের ইতিহাসে অন্ত্যজ শ্রেণি থেকে উঠে আসা স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত গাল্পিক ও ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের মতো আর কেউ আছেন বলে আমার জানা নেই। সে জন্যই তার উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ স্বকীয় বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল। এর সঙ্গে কারো উপন্যাসই মেলানো যায় না। গল্পও। তিনি যাদের মধ্য থেকে বড় হয়েছেন তাদের কাহিনী নিয়েই উপন্যাসের ঘটনাবলি সাজানো হয়েছে। তিতাস নদীর তীরে জেলেদের গ্রাম। সে গাঁয়ে তারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে। তাদের জীবিকা নির্বাহ হয় তিতাসের বুক থেকে।” ‘তিতাস’ যে পৃথক একটি সত্তা এবং ‘কঠিন বাস্তব ছাঁচে বানানো অপরূপ শিল্পিত জীবন গাঁথা’ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে এ মূল্যায়নে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ জীবন ঘষে রচনা করেছিলেন এ উপন্যাসটি। যা তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে। বাস্তবতা যে তার জীবদ্দশায় উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। প্রতিটি মানুষ বড় হয়ে ওঠে তার পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে। অর্জিত হয় নানা অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতার সারাৎসার চিরন্তন রূপ দিতে পারেন শুধু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখক। অদ্বৈত মল্লবর্মণ মালোপাড়ায় জন্মেছিলেন। সেই মালোদের জীবনের সঙ্গে ছিল তার প্রাণের স্পন্দন। সঙ্গত কারণেই এ স্পন্দনকে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন উপন্যাসে। রাইন, সীন বা দানিয়ুবের মতো ক্ষুদ্র নদী তীরে যেমন গড়ে উঠেছে নদীকেন্দ্রিক ইউরোপীয় সভ্যতা তেমনি তিতাসের তীরেও গড়ে উঠেছিল এক সৃষ্টিশীল জীবন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। উপন্যাসের ভূমিকায় যা তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো লিখেছেন – ‘কত নদীর তীরে একদা নীল-ব্যাপারীদের কুঠি-কেল্লা গড়িয়া উঠিয়াছিল। তাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো খুঁজিয়া পাওয়া যায়। কত নদীর তীরে মোগল-পাঠানের তাঁবু পড়িয়া আছে, মগদের ছিপনৌকা রক্ত-লড়াইয়ে মাতিয়াছে-উহাদের তীরে তীরে কত যুদ্ধ হইয়াছে। মানুষের রক্তে হাতিঘোড়ার রক্তে সেসব নদীর জল কত লাল হইয়াছে। আজ হয়তো তারা শুকাইয়া গিয়াছে, কিন্তু পুঁথির পাতায় রেখা কাটিয়া রহিয়াছে। তিতাসের বুকে তেমন কোন ইতিহাস নাই। সে শুধু একটা নদী।’
লক্ষণীয় যে, বাংলাভাষী ভূ-খণ্ডের আর্থ-সামাজিক সংস্থান, উৎপাদন কাঠামো, শ্রেণিবিন্যাস ও সমাজ বিবর্তনের ক্রমধারায় উপন্যাসে বিষয়বৈচিত্র্য ও চরিত্রচিত্রণে নিম্নবর্গের প্রাধান্য সুস্পষ্ট। নিম্নবর্গের বহুমাত্রিক আচরণ, জীবন বাস্তবতা, কৌমসংস্কৃতির সারবত্তা উপস্থাপিত হয়েছে ঔপন্যাসিকদের অনেক আখ্যানে। উপন্যাসের যাত্রালগ্নে সাধারণ মানব-মানবীর জীবন অবলোকন সূত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নবর্গের মানুষের জীবন উন্মোচিত হয়েছে। ‘আলালের ঘরের দুলাল’ এর ঠকচাচা, ‘কপালকুণ্ডলা’র নির্মম ধর্মসাধনায় নিয়োজিত কাপালিক, ‘ইন্দিরা’, ‘রজনী’, ‘বিষবৃক্ষ’ ও ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলো নিম্নবর্গের অন্যতম নিদর্শন। বিষবৃক্ষের হীরা দাসীর চরিত্রটি নারীর নিম্নবর্গত্বের ব্যতিক্রমী রূপায়ণ হিসেবে স্বীকৃত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’র বিনোদিনী নিরাশ্রয় নারীর নিম্নবর্গত্বকে প্রকাশ করে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে সরাসরি মালো জীবনের দুঃখগাথা অঙ্কন করেছেন। এ সম্প্রদায়ের জীবন যথাযথ রূপায়ণের যে চেষ্টা এ উপন্যাসে দেখা যায় তা অত্যন্ত বাস্তব। তিতাস তীরবর্তী গ্রামগুলোর সবুজের ছড়াছড়ি ও পাকা ধানের মাদকতাময় গন্ধ পাঠককে নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সেই সঙ্গে পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয় সহজ-সরল গ্রাম্য মানুষের মুখচ্ছবি। ছোট-বড় অনেক চরিত্রের সমন্বয়ে এ উপন্যাস রচিত। অদ্বৈত সৃষ্ট কিশোর, সুবল, অনন্ত, বনমালী প্রমুখ অসংখ্য চরিত্র স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল। এ চরিত্রগুলোর মাধ্যমে মালো জীবনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তিনি তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটনে বিপর্যস্ত জীবন। বিভিন্ন মত-পথ, ধর্ম-বর্ণের লোক কীভাবে একত্রে পরম ধৈর্যের সঙ্গে কষ্টগুলো অতিক্রম করে যেতে পারে পারস্পরিক সম্প্রীতির মধ্য দিয়েÑতা স্পষ্ট হয় এ উপন্যাসে। চরিত্রগুলোর মুখে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ ও যথাযথ পরিবেশ বর্ণনার চেষ্টায় সফল হয়েছেন উপন্যাসিক।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে উপন্যাসিকের সতীর্থ অধ্যাপক সুবোধ চৌধুরী বলেন,
“আমি তিতাস দেখেছি। আমি সমুদ্র দেখেছি, পাহাড় দেখেছি। অনেক বিচিত্রতর মানুষের সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু অদ্বৈত মল্লবর্মণের ছিল মানুষ সম্পর্কে সুগভীর Insight, এমনটি আমাদের ছিল না। আমরা দেখেছি, দর্শকের মতো, ভালো হয়তো লেগেছে। তবে অদ্বৈত দেখেছেন শিল্পীর চোখে। তার সত্তার সঙ্গে তিতাস ছিল মিশে। এটা পৃথক করতে পারেননি তিনি, চানওনি। তার ওপর ছিল উদার দৃষ্টিভঙ্গি। …প্রথম যখন পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিলেন, আমি বলেছিলাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আর কি তোমার বই নেবে? অদ্বৈত বললেন – সুবোধ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বড় Artist, Master artist: কিন্তু বাওনের পোলা, রোমান্টিক। আর আমি তো ‘জাউয়ার পোলা’। আর কিছু বলেননি। পরিচয়ের এ প্রত্যক্ষতাই ছিল তার গৌরবের ভিত।”
ফলে একথা বলা বোধ করি অত্যুক্তি হয় না, গোকর্র্ণ গ্রামের ধীবর সম্প্রদায়ের জীবনচর্চা যে আন্তরিক মমতায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ তুলে এনেছেন তার উপন্যাসে, তার তুলনা বাংলা সাহিত্যে বিরল। লেখক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এক উপেক্ষিত সমাজের জীবন সংগ্রামের কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বরতা। চার খণ্ড ও দুটি পরিচ্ছদে রচিত এ উপন্যাসে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ পর্বে তিতাস নদীর বৈশিষ্ট্য, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিতাস পাড়ের মালোদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে আছে গৌরাঙ্গসুন্দর আর নিত্যানন্দ নামে দুই মালোর জীবন সংগ্রামের কাহিনী। এরাই অনন্তের মাকে নিয়ে যায় গোকর্ণঘাটে। গৌরাঙ্গ মালোর জীবন দারিদ্র্যে পিষ্ট এবং তার দিন আর চলে না তার উপস্থাপনা রয়েছে। গৌরাঙ্গের জীবনচিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়, তিতাসের জলের সঙ্গে তাদের জীবন বাঁধা। তিতাসে যখন জল কম থাকে তখন মালোদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মানুষের জীবন কীভাবে নদীর পানির সঙ্গে জড়িত তারই ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। কত রকম পেশায় বাংলাদেশের মানুষ জড়িত সেটিও স্পষ্ট হয়।
উপন্যাসের শেষভাগে গোকর্ণ গ্রামকে করে তোলা হয়েছে যেন এক হতাশাগ্রস্ত জনপদ। দেখে চেনার উপায় নেই এখানে একদিন জনবহুল এক মালোপাড়া ছিল। মালোপাড়ায় আর মালোরা নেই আছে শুধু জল। হায়রে তিতাস! মালোদের জীবন ছিল একদিন যার সঙ্গে বাঁধা। মালো সম্প্রদায়ের মানুষ কোনো কিছুর জন্য শপথ করলে তিতাসের জল নিয়েই শপথ করত। তাদের বিশ্বাস ছিল – তিতাস তাদের সঙ্গে ছলনা করবে না। অথচ মালোদের সেই বিশ্বাসকে তিতাস রিক্ত করে দেয়। মালোরা উদ্বাস্তু হয়ে যায় তিতাস থেকে। নদী তাদের আর মায়ের মতো আশ্রয় দেয় না। তিতাসের কোলে জন্মানো তিতাসের সন্তানরা তিতাসেই হারিয়ে যায়। তিতাস পাড়ের মালোদের ঘরবাড়ি সম্পর্কে উপন্যাসের ‘শূন্য ভিটাগুলিতে বর্ণনায় আছে’ -‘গাছ-গাছড়া হইয়াছে। তাতে বাতাস লাগিয়া শোঁ শোঁ শব্দ হয়। এখানে পড়িয়া যারা মরিয়াছে, সেই শব্দে তারাই বুঝি বা নিঃশ্বাস ফেলে।’
অস্বীকারের উপায় নেই যে – ‘তিতাসের গৌরবান্বিত বর্ণনায় উপন্যাসের কাহিনী শুরু হলেও শেষ হয় দীর্ঘ হতাশ্বাসের মধ্য দিয়ে। নদী কীভাবে মানুষের কবিতা হয়ে ওঠে সেটি এ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি চরিত্রই শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে তিতাসের রূপ পরিবর্তনের কাছে। তিতাসের বুকে চর জেগে ওঠায় তিতাস তার সন্তানদের মতো নুইয়ে পড়েছে।’ দেখা যায় উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাসন্তী আর কিশোর পিতা রামকেশব জীবিত থাকে। দুজনেই নিঃস্ব, রিক্ত। রামকেশব তার পুত্রকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল তা ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়। কিশোর অনন্তের মাকে বিয়ে করার পর যখন স্ত্রী হারিয়ে পাগল হয়ে যায় তারপরও আশাভঙ্গের বেদনা নিয়ে শেষ পর্যন্ত রামকেশব বেঁচে থাকে। চোখের সামনে পুত্রের এ নির্মম ট্রাজেডিতে বিধ্বস্ত হয় পিতা রামকেশবের দেহমন। আর অনন্তের মা শেষ পর্যন্ত ঠাহর করতে পারে কিশোরই ছিল তার স্বামী। কিন্তু যখনই সে কিশোরের সেবা শুরু করে তখনই সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত গণপিটুনীতে দুজনই মারা যায়। মিশে যায় সব অনুভূতি তিতাসের জলে।
‘নদীর একটা দার্শনিক রূপ আছে। নদী বহিয়া চলে।… তিতাসও কতকাল ধরিয়া বহিয়া চলিয়াছে’ – তিতাসের এ বয়ে চলার সঙ্গে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষের কান্নার রোল জড়িত, যা অস্বীকারের সুযোগ থাকে না কারো। তবে মহাকালের সঙ্গে নিম্নবর্গ মানুষের জীবনের ইতিহাস নিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ যে দার্শনিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা নিঃসন্দেহে তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে।
তিতাস নদীর উৎপত্তি মেঘনা নদী থেকে। মেঘনার জল নদীর এক পাড় ভেঙে জঙ্গল, মাঠ, ময়দানের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার মেঘনায় এসে পড়েছে। মেঘনা থেকে উদভূত এই ধারাই তিতাস নদী নামে পরিচিত। কাহিনীর সুচনাকালে তিতাসকে একটি জলভরা নদী হিসেবে লেখক বর্ণনা করেছেন। সারা বছরেই তিতাসের বুকে জল থাকে। তিতাস থেকে তেরো মাইল দূরে একটি নদী আছে বিজয় নামে। বিজয় নদীতে বর্ষাকাল ছাড়া জল প্রায় থাকে না এবং সেই কারণে বিজয় নদীর তীরে বসবাসকারী মালোদের আর্থিক ও শারীরিক অবস্থা খুবই দৈন্য। এইরকমই আর্থিক অনটনে ক্লিষ্ট দুই ভাই গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দ বিজয়নদীর তীরে বাস করত। গৌরাঙ্গের বউ অনাহারে মারা গিয়েছিল। নিত্যানন্দের বউ ও দুই ছেলেমেয়ে ছিল। গৌরাঙ্গ তার দাদাকে পরামর্শ দেয় নয়ানপুরের ধনী বোধাই মালোর হয়ে খাটার জন্য। অন্যদিকে জমিলা বলে একজন নববধু তার স্বামী ছমির মিয়ার সঙ্গে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফেরে নৌকা করে। আসবার পথে সে মালোপাড়ার ঘাটে একটি মেয়েকে দেখে এবং সই হিসেবে বন্ধুত্ত্ব পাতানোর আশা করে।
বাসন্তী তার মাকে ডেকে বলে, “মা, ওমা, দেখ সুবলদাদা কিশোরদাদার কাণ্ড! আমি চৌয়ারি জলে ছাড়তে না ছাড়তে তারা দুইজনে ধরতে গিয়ে কি কাইজ্যা। এ কয় আমি নিমু, হে কয় আমি নিমু। ডরে আর কেউ কাছেও গেল না। শেষে কি মারামারি। আমি কইলাম, দুই জনে মিল্যা বানাইছ দুই জনে নিয়া রাইখ্যা দাও। মারামারি কর কেনে?”
“”
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
তিতাসের পাড়ে বসবাসী মালোদের মধ্যে একজন ছিল দীননাথ মালোর কমবয়েসী মেয়ে বাসন্তী। বাসন্তীর গ্রামেই ছিল কিশোর আর সুবল নামে দুজন ডানপিটে কমবয়েসি ছেলে। তারা দুইজনে মিলে বাসন্তীর মাঘমণ্ডল ব্রতর জন্য চৌয়ারির বানিয়ে দেয়।[ক] সুবলের বাবা মারা যাওয়ায় সে কিশোরের সঙ্গে নদীতে জাল বাইতো। কিশোর সুবলের থেকে তিন বছরের বড় ছিল। কিন্ত তারা ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের বন্ধু। একদিন কিশোরের বাবা কিশোর ও সুবলকে প্রবীণ জেলে তিলকচাঁদের সঙ্গে উত্তরে শুকদেবপুর গ্রামে পাঠায়। তখন বাসন্তীর বয়স ১১ বছর। কিশোররা শুকদেবপুরের মোড়ল বাঁশিরামের বাড়ি পৌঁছায় মাছ ধরার অনুমতি আদায়ের জন্য। এর মধ্যে চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দোল পূর্ণিমা এসে যায়। শুকদেব পুরের খলাতে দোল খেলার জন্য শুকদেবপুরের সকলের আমন্ত্রণ পড়ে এবং বাঁশিরাম মোড়লের গাঙের রায়ত হিসেবে কিশোর-সুবলরাও ডাক পায়। দোল খেলার সময় তরুণীরা কিশোরকে রঙ মাখায়। কিন্তু তাকে রঙ মাখাতে গিয়ে একটি অবিবাহিতা তরুণীর হাত কাঁপতে থাকে। দোলের অনুষ্ঠান চলার সময় মেয়েটির সঙ্গে কিশোরের চোখাচোখি হয়। হঠাৎই বাসুদেবপুরের লোকেরা ওখানে আক্রমণ চালায় পুরানো গন্ডগোলের রেশ ধরে। একজন আক্রমণকারী ওই তরুণীর দিকে অগ্রসর হয়, কিশোর তাকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে যায়। মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে কিশোর মেয়েটিকে পাঁজকোলা করে নিয়ে মেয়েটির মার কাছে নিয়ে যায়। এরপরে বাঁশিরাম মোড়লেরর বউয়ের পৌরোহিত্যে কিশোর ওই মেয়েটির সঙ্গে মালা বদল করে এবং মেয়েটির বাবা ও মা তাকে কিশোরের নৌকায় তুলে দেয়। কিশোরদের নৌকা যাত্রাপথে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে, শেষে তারা নয়া গাঙের খাঁড়িতে নৌকা বাঁধে। সেখানে তারা রাতে ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম ভেঙে দেখে যে তাদের নৌকায় ডাকাতি হয়ে গেছে এবং ডাকাতরা কিশোরের বউকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের নৌকা যখন তিতাসের মোহনায় পৌঁছায় তখন কিশোর জলে একটি নারীদেহ ভাসতে দেখে এবং বুঝতে পারে যে ওটা কিশোরেরই বউ এবং তারা মনে করে যে মেয়েটি মারা গেছে। কিশোরের চোখ লাল হয়ে ওঠে; তিলক সুবলকে বলে যে কিশোর পাগল হয়ে গেছে।
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
তিতাসের পাড়ে বসবাসী মালোদের মধ্যে একজন ছিল দীননাথ মালোর কমবয়েসী মেয়ে বাসন্তী। বাসন্তীর গ্রামেই ছিল কিশোর আর সুবল নামে দুজন ডানপিটে কমবয়েসি ছেলে। তারা দুইজনে মিলে বাসন্তীর মাঘমণ্ডল ব্রতর জন্য চৌয়ারির বানিয়ে দেয়।[ক] সুবলের বাবা মারা যাওয়ায় সে কিশোরের সঙ্গে নদীতে জাল বাইতো। কিশোর সুবলের থেকে তিন বছরের বড় ছিল। কিন্ত তারা ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের বন্ধু। একদিন কিশোরের বাবা কিশোর ও সুবলকে প্রবীণ জেলে তিলকচাঁদের সঙ্গে উত্তরে শুকদেবপুর গ্রামে পাঠায়। তখন বাসন্তীর বয়স ১১ বছর। কিশোররা শুকদেবপুরের মোড়ল বাঁশিরামের বাড়ি পৌঁছায় মাছ ধরার অনুমতি আদায়ের জন্য। এর মধ্যে চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দোল পূর্ণিমা এসে যায়। শুকদেব পুরের খলাতে দোল খেলার জন্য শুকদেবপুরের সকলের আমন্ত্রণ পড়ে এবং বাঁশিরাম মোড়লের গাঙের রায়ত হিসেবে কিশোর-সুবলরাও ডাক পায়। দোল খেলার সময় তরুণীরা কিশোরকে রঙ মাখায়। কিন্তু তাকে রঙ মাখাতে গিয়ে একটি অবিবাহিতা তরুণীর হাত কাঁপতে থাকে। দোলের অনুষ্ঠান চলার সময় মেয়েটির সঙ্গে কিশোরের চোখাচোখি হয়। হঠাৎই বাসুদেবপুরের লোকেরা ওখানে আক্রমণ চালায় পুরানো গন্ডগোলের রেশ ধরে। একজন আক্রমণকারী ওই তরুণীর দিকে অগ্রসর হয়, কিশোর তাকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে যায়। মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে কিশোর মেয়েটিকে পাঁজকোলা করে নিয়ে মেয়েটির মার কাছে নিয়ে যায়। এরপরে বাঁশিরাম মোড়লেরর বউয়ের পৌরোহিত্যে কিশোর ওই মেয়েটির সঙ্গে মালা বদল করে এবং মেয়েটির বাবা ও মা তাকে কিশোরের নৌকায় তুলে দেয়। কিশোরদের নৌকা যাত্রাপথে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে, শেষে তারা নয়া গাঙের খাঁড়িতে নৌকা বাঁধে। সেখানে তারা রাতে ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম ভেঙে দেখে যে তাদের নৌকায় ডাকাতি হয়ে গেছে এবং ডাকাতরা কিশোরের বউকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের নৌকা যখন তিতাসের মোহনায় পৌঁছায় তখন কিশোর জলে একটি নারীদেহ ভাসতে দেখে এবং বুঝতে পারে যে ওটা কিশোরেরই বউ এবং তারা মনে করে যে মেয়েটি মারা গেছে। কিশোরের চোখ লাল হয়ে ওঠে; তিলক সুবলকে বলে যে কিশোর পাগল হয়ে গেছে।
জন্ম মৃত্যু বিবাহ
গ্রামে কালীপূজা হয়, পূজোতে সবাই চাঁদা দেয়, কিন্তু রামকেশবের চাঁদা মাফ হয়ে যায় তার ছেলে পাগল বলে। রামপ্রসাদ চাঁদা না দেওয়ার জন্য সে সঙ্কোচে প্রসাদ খায় না এবং তার ছেলে কিশোরকেও ঘরে বন্ধ করে রাখে পূজোর চারদিন। উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন মালোরা প্রচুর খরচ করে খাওয়া দাওয়া করে। তাতে রামকেশব ঠিক করে সেও রামপ্রসাদ, মঙ্গলা ও তার ছেলে মোহন, সুবলার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর গ্রামের নতুন বাসিন্দা অনন্তর মাকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াবে। সুবলার বউ অনন্তর মাকে রামকেশবের বাড়িতে রান্নাঘরে পিঠা বানাতে নিয়ে যায়। সেখানে দুজনের কথোপকথনে জানা যায় যে কিশোর পাগল হয়ে বাড়ি আসার পর, বাসন্তীর বাবা কিশোরের বদলে সুবলের সাথে বাসন্তীর বিয়ে দেয়। সুবল একদিন কালোবরণের নৌকায় জিয়লের ক্ষেপ দিতে যায়। যখন নদীতে হঠাৎ তুফান আসে তখন সবাই নৌকা থেকে ঝাঁপ দিলেও সুবলের উপর নির্দেশ আসে লগি ঠেকিয়ে নৌকা বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তা করতে গিয়ে সে নৌকার তলায় চাপা পড়ে মারা যায়। এরপর থেকে অনন্তর মা প্রায় লুকিয়ে কিশোরকে দেখত। শীতে কিশোরের পাগলামি বেড়ে যায়। এরপর আরেক পাগলের সঙ্গে পড়ে নিজেকে জখম করতে থাকে। শেষে অনন্তর মা বাধ্য হয়ে কিশোরের সেবা করতে শুরু করে এবং কিশোর খানিকটা ভালো হয়ে ওঠে। এরপর দোলের দিন আসে; অনন্তর মা কিশোরকে রঙ মাখাতে যায়। কিন্তু রঙ মাখানোর পর কিশোর হঠাৎ অনন্তর মাকে পাঁজকোলা করে তুলে নেয় আর মূর্ছা যাওয়া অনন্তর মার আবরণ সরে যাওয়া বুকে মুখ ঘষতে থাকে। এসব দেখে গ্রামের মানুষ কিশোরকে প্রচন্ড মারধর করে। মারের চোটে কিশোর পরদিন ভোরে মারা যায়। আর তার চারদিন পরে অনন্তর মা মারা যায়।
রামধনু
সুবলের বউকে পাইয়া অনন্তের মা মনের আবেগ ঢালিয়া দেয়, তুমি না কইছিলা ভইন আমার একজন পুরুষ চাই! হ; চাই-ই ত। পুরুষ ছাড়া নারীর জীবনে কানাকড়ি দাম নাই।
পুরুষ একটা ধর না।
কই পাই?
পাগলারে ধর।
ধরতে গেছলাম। ধরা দিল না।
ঠিসারা কইর না দিদি।
আমি ভইন ঠিসারা করি না। সত্য কথাই কই। পাগলা যদি আমারে হাতে ধইরা টান দেয়, আমি গিয়া তার ঘরের ঘরনি হই। আর ভাল লাগে না।… … একলা জীবন চলে না। পাগলেরে পাইলে তারে লখ কইরা জীবন কাটাই।
পুরুষ একটা ধর না।
কই পাই?
পাগলারে ধর।
ধরতে গেছলাম। ধরা দিল না।
ঠিসারা কইর না দিদি।
আমি ভইন ঠিসারা করি না। সত্য কথাই কই। পাগলা যদি আমারে হাতে ধইরা টান দেয়, আমি গিয়া তার ঘরের ঘরনি হই। আর ভাল লাগে না।… … একলা জীবন চলে না। পাগলেরে পাইলে তারে লখ কইরা জীবন কাটাই।
“”
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
কাদির মিয়া ও তার ছেলের সকরকন্দ আলু বোঝাই নৌকা ভারী বর্ষণে ও জোড়ালো বাতাসে ডুবে যাওয়া উপক্রম হলে বনমালী ও ধনঞ্জয় তাদের ও তাদের আলু উদ্ধার করে নিজেদের জেলে নৌকাতে তুলে নেয়। বনমালী ও কাদির মিয়ার সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে। বনমালী জানায় মালোপাড়ায় তার বোনের বিয়ে হয়েছে, তার পরামর্শে সে ও কাদির মালোপাড়ায় আলু বেচতে যায়। ওখানে অনন্ত কাদির মিয়ার আলুর পসরার সামনে ঘোড়াঘুড়ি করে। বনমালী ও কাদির মিয়া দুইজনেই দেখে অনন্ত বিস্ময় দৃষ্টিতে রামধনুর দিকে তাকিয়ে আছে। বনমালীর অনন্তকে খুব পছন্দ হয়, তাকে নিয়ে একটু ঘুড়ে বেড়ায় ও তাকে একদিন নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দেয়। এদিকে সুবলার বউ অনন্তর পক্ষ থেকে অনন্তর মার শ্রাদ্ধের ব্যবস্থাদি করে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে বনমালীর বোন তদারকি করে, তার ছড়া কাটার ভালো ক্ষমতা ছিল। একদিন ঝড়ে সুবলার বউয়ের, মানে অনন্তর মাসীর, বাবার বাড়ি ভেঙে যায়। বাড়ি পুনরায় বানাতে প্রচুর খরচ হওয়ায় তার বাবা ও মা অনন্তকে, যে ওই বাড়িতেই থাকত, তাকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা করতে থাকে। কালোবরণের মাও অনন্তকে রাখতে অস্বীকার করে কারণ তাদের বড় নৌকা ঝড়ে ভেঙে যাওয়ায় খুব ক্ষতি হয়েছে। একদিন বাসন্তীর, মানে সুবলার বউয়ের, মা অনন্তকে মারতে যায়, তাই নিয়ে মায়ে মেয়েতে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এইসব কিছুতে বাসন্তীর মাথা গরম হয়ে যায় ও অনন্তকে বাড়ি থেকে দূর করে দেয়। অনন্ত গামছায় মাছ ধরে, একা ঘুড়ে বেড়ায়, একদিন বনমালীর বোন অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউয়ের বাড়ি যায়, কিন্ত পরে নিজেই বেড়িয়ে যায়। কেউ জানত না সে কোথায় থাকে। শেষে বনমালী তাকে খুঁজে বার করে নিজের সঙ্গে ও বোন উদয়তারা অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউ কে নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। অনন্ত সেখানে বনমালীর পদ্মাপুরাণ পড়া এবং অন্যান্য লোকাঁচার ও অনুষ্ঠান অবলোকন করে। বনমালীর গ্রামে অনন্তর সঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ের পরিচয় হয়, সে জানায় তার নামও অনন্ত।
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
কাদির মিয়া ও তার ছেলের সকরকন্দ আলু বোঝাই নৌকা ভারী বর্ষণে ও জোড়ালো বাতাসে ডুবে যাওয়া উপক্রম হলে বনমালী ও ধনঞ্জয় তাদের ও তাদের আলু উদ্ধার করে নিজেদের জেলে নৌকাতে তুলে নেয়। বনমালী ও কাদির মিয়ার সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে। বনমালী জানায় মালোপাড়ায় তার বোনের বিয়ে হয়েছে, তার পরামর্শে সে ও কাদির মালোপাড়ায় আলু বেচতে যায়। ওখানে অনন্ত কাদির মিয়ার আলুর পসরার সামনে ঘোড়াঘুড়ি করে। বনমালী ও কাদির মিয়া দুইজনেই দেখে অনন্ত বিস্ময় দৃষ্টিতে রামধনুর দিকে তাকিয়ে আছে। বনমালীর অনন্তকে খুব পছন্দ হয়, তাকে নিয়ে একটু ঘুড়ে বেড়ায় ও তাকে একদিন নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দেয়। এদিকে সুবলার বউ অনন্তর পক্ষ থেকে অনন্তর মার শ্রাদ্ধের ব্যবস্থাদি করে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে বনমালীর বোন তদারকি করে, তার ছড়া কাটার ভালো ক্ষমতা ছিল। একদিন ঝড়ে সুবলার বউয়ের, মানে অনন্তর মাসীর, বাবার বাড়ি ভেঙে যায়। বাড়ি পুনরায় বানাতে প্রচুর খরচ হওয়ায় তার বাবা ও মা অনন্তকে, যে ওই বাড়িতেই থাকত, তাকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা করতে থাকে। কালোবরণের মাও অনন্তকে রাখতে অস্বীকার করে কারণ তাদের বড় নৌকা ঝড়ে ভেঙে যাওয়ায় খুব ক্ষতি হয়েছে। একদিন বাসন্তীর, মানে সুবলার বউয়ের, মা অনন্তকে মারতে যায়, তাই নিয়ে মায়ে মেয়েতে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এইসব কিছুতে বাসন্তীর মাথা গরম হয়ে যায় ও অনন্তকে বাড়ি থেকে দূর করে দেয়। অনন্ত গামছায় মাছ ধরে, একা ঘুড়ে বেড়ায়, একদিন বনমালীর বোন অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউয়ের বাড়ি যায়, কিন্ত পরে নিজেই বেড়িয়ে যায়। কেউ জানত না সে কোথায় থাকে। শেষে বনমালী তাকে খুঁজে বার করে নিজের সঙ্গে ও বোন উদয়তারা অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউ কে নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। অনন্ত সেখানে বনমালীর পদ্মাপুরাণ পড়া এবং অন্যান্য লোকাঁচার ও অনুষ্ঠান অবলোকন করে। বনমালীর গ্রামে অনন্তর সঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ের পরিচয় হয়, সে জানায় তার নামও অনন্ত।
রাঙা নাও
বিরামপুর গ্রামে কাদির তার ছেলে ছাদির, ছাদিরের ছেলে রমু ও বউ খুশিকে নিয়ে বাস করে। কাদির তার ছেলেকে জানায় যে উজানচরের মাগন সরকার তার নামে ধারের মিথ্যে মামলা লাগিয়ে জমি দখল করে নিতে চায় যদিও কাদিররা পাট বেচে ধারের টাকাটা মিটিয়ে দিয়েছিল। এরমধ্যে খুশির বাবা তাদের বাড়িতে আসে মেয়েকে বাপের বাড়ি কয়েক দিনের জন্য নিয়ে যাবার জন্য। খুশির বাবা মুহুরী ছিল, সে বলে সে মামলা জিতিয়ে দেবে কাদিরকে, কিন্ত তাদের মধ্যে বচসা হয়ে যায়। এরপর কাদির মিয়া চোখ লাল করে মাগন সরকারের কাছে যায়, কিন্ত মাগন সরকার তাকে বলে যে এই শেষ বারের জন্য যেন তাকে এই সর্বনাশ করতে দেওয়া হয়, তারপর সে ভাল হয়ে যাবে। কাদিরও হতভম্ব হয়ে মেনে নেয়। কিন্ত পরদিনই মাগন সরকার নারকেল গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যায়। কাদির তা শুনে উদাস হয়ে যায়। ছাদির শ্রাবণে নৌকা দৌড়ে চালানোর জন্য বড় নৌকা বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে কাদিরের কাছে টাকা চাইলে কাদির দুহাত খুলে টাকা দিয়ে দেয়। দুজন মালো এসে ছাদিরের নৌকা বানিয়ে দিয়ে যায়। ভাদ্রের ১লা তারিখে সেই নৌকা জলে ভাসে। সেই দিন তিতাসে অনেক নৌকার সমাগম হয়। উদয়তারা, অনন্ত, অনন্তবালা, বনমালী একটা নৌকায় ছিল। আরেকটি নৌকা থেকে সুবলার বউ অনন্তকে দেখতে পেয়ে, তার নৌকায় গিয়ে ওঠে। কিন্ত সেখানে উদয়তারার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং সবাই মিলে সুবলার বউকে মারধর করে।
দুরঙা প্রজাপতি
— কিরে গোলাম! বিয়া করবি?
— করমু।
— ক দেখি বিয়া কইরা কি করে?
— ভাত রান্ধায়
— হি হি হি, কইতে পারলি না গোলাম, কইতে পারলি না। বিয়া কইরা লোকে বউয়ের ঠ্যাং কান্ধে লয়, বুঝলি হি হি হি। … … আমারে বিয়া করবি?
মোটাসোটা ঠ্যাং দুটির ভয়ে ভয়ে তাকাইয়া অনন্ত বলিল, না।
— করমু।
— ক দেখি বিয়া কইরা কি করে?
— ভাত রান্ধায়
— হি হি হি, কইতে পারলি না গোলাম, কইতে পারলি না। বিয়া কইরা লোকে বউয়ের ঠ্যাং কান্ধে লয়, বুঝলি হি হি হি। … … আমারে বিয়া করবি?
মোটাসোটা ঠ্যাং দুটির ভয়ে ভয়ে তাকাইয়া অনন্ত বলিল, না।
“”
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
উদয়তারাদের হাতে মার খাবার পর সুবলার বউ অপমানে ঘরের মধ্যেই বেশীরভাগ সময় থাকতে শুরু করে। কিন্তু বামুন কায়েতের যুবকরা তার বাড়ির দিকে উঁকি ঝুঁকি মারা শুরু করে আর তার নামে কুৎসা রটায়। সুবলার বউ এর প্রতিবাদে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে তামসীর বাবার বাড়ির সামনে, ওখানেই বামুন, কায়েতদের বেশি যাতায়াত ছিল। সুবলার বউয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য মালো ছেলেরা একদিন তিনজন তবলা বাদককে মার দেয়। অন্যদিকে দৌড়ের সময় ছাদিরের নৌকাকে অন্য এক নৌকা ধাক্কা মেরে ভেঙে দেয়। বনমালী ছাদিরকে উদ্ধার করে। কাদির বনমালীকে আগেই চিনত, সে বনমালীকে আপ্যায়ণ করে। কাদিরের মেয়ে জমিলা উদয়তারাকে বলে সে তাকে শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় দেখেছিল এবং সই পাতানোর ইচ্ছা করেছিল। অনন্ত গ্রামে ফিরে পড়াশোনায় মন দেয় ও পড়াশোনাকে ভালোবাসে। এদিকে মালোপাড়ায় যাত্রাদলের রমরমাতে মালোরা দুদলে ভাগ হয়ে যেতে থাকে তাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণের উপর চিন্তাধারা ভিত্তিতে। সুবলার বউ মোহনকে সঙ্গে নিয়ে হরিবংশ, ভাটিয়ালি প্রভৃতি মালো সংস্কৃতির গান গেয়ে অন্য মালোদের যাত্রাদল থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয় না।
— “তিতাস একটি নদীর নাম”
উদয়তারাদের হাতে মার খাবার পর সুবলার বউ অপমানে ঘরের মধ্যেই বেশীরভাগ সময় থাকতে শুরু করে। কিন্তু বামুন কায়েতের যুবকরা তার বাড়ির দিকে উঁকি ঝুঁকি মারা শুরু করে আর তার নামে কুৎসা রটায়। সুবলার বউ এর প্রতিবাদে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে তামসীর বাবার বাড়ির সামনে, ওখানেই বামুন, কায়েতদের বেশি যাতায়াত ছিল। সুবলার বউয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য মালো ছেলেরা একদিন তিনজন তবলা বাদককে মার দেয়। অন্যদিকে দৌড়ের সময় ছাদিরের নৌকাকে অন্য এক নৌকা ধাক্কা মেরে ভেঙে দেয়। বনমালী ছাদিরকে উদ্ধার করে। কাদির বনমালীকে আগেই চিনত, সে বনমালীকে আপ্যায়ণ করে। কাদিরের মেয়ে জমিলা উদয়তারাকে বলে সে তাকে শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় দেখেছিল এবং সই পাতানোর ইচ্ছা করেছিল। অনন্ত গ্রামে ফিরে পড়াশোনায় মন দেয় ও পড়াশোনাকে ভালোবাসে। এদিকে মালোপাড়ায় যাত্রাদলের রমরমাতে মালোরা দুদলে ভাগ হয়ে যেতে থাকে তাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণের উপর চিন্তাধারা ভিত্তিতে। সুবলার বউ মোহনকে সঙ্গে নিয়ে হরিবংশ, ভাটিয়ালি প্রভৃতি মালো সংস্কৃতির গান গেয়ে অন্য মালোদের যাত্রাদল থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয় না।
যাত্রাদলের কাছে আত্মসমর্পণের পর মালোদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে এবং মেয়েদের বিলাসিতা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে একদিন মালোরা বিস্ময়ে আবিষ্কার করে যে তিতাসের বুকে ভাসমান চর গজিয়ে উঠেছে। দূরদূরান্তের চাষিরা ওই চরের দখলের জন্য মারামারি শুরু করে। মালোরা বর্ষাকালের জলের উপরই নির্ভর করে থাকে। রামপ্রসাদ জেলেদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নিজে চর দখল করতে গিয়ে মারা যায়। এদিকে অনন্তবালার বিয়ের বয়স হয়ে যায়, কিন্ত সে অনন্তের আশায় বসে থাকে, যে কুমিল্লা শহরে চলে গিয়েছিল। অনন্তবালার বাবার পরামর্শে বনমালী অনন্তর শহরে যায় এবং অনন্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। বনমালী এখন মাছের পোনার মজুরি খাটে। উদয়তারা বনমালীর বাড়ি থেকে অনেকদিন পরে শ্বশুরবাড়ীতে আসে এবং এসে বাসন্তীর, মানে সুবলার বউয়ের, সঙ্গে তার পুরনো ঝাগড়া মিটিয়ে ফেলে। মালোদের অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে এবং একে একে উদয়তারার বর, বাসন্তীর বাবা-মা, মোহনের বাবা মারা যায়। সুবলার বউ অত দু:খের মধ্যেও অনন্তর খোঁজ নিত। সে জানতে পারে অনন্তের সাক্ষাৎ বিরামপুরের কাদিরের সঙ্গে হয়। সেদিন বনমালী মারা যায়, তা দেখে কাদির তার ধানের গোলা খুলে দেয় বিতরণ করার জন্য। অনাহারে সুবলার বউ সবাইকে নিয়ে চিন্তায় দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে এবং একসময় তার শিথিল হাত থেকে জলভরা লোটা পড়ে যায়।
admin@masudbdtech.blogspot.com
admin@masudbdtech.blogspot.com
No comments