(বিষাদ সিন্ধু) - মীর মশাররফ হোসেন
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন জমিদার এবং মা দৌলাতুন্নেছা। তিনি কুষ্টিয়ায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে কলকাতার একটি স্কুলে ভর্তি হন। তিনি আরবি, ফারসি শিখতেন। তিনি প্রথমে রিপোর্টার এবং পরে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন।
তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলিম লেখক যিনি উপন্যাস রচনা শুরু করেছিলেন যা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা বিষাদ সিন্ধু ’যা কারবালার গল্প এবং ইমাম হাসান ও হুসেনের মৃত্যুর বিবরণ দেয়। তাঁর অন্যান্য দুর্দান্ত রচনাগুলি হলেন জামিদার দর্পণ (১৮৭৩) এবং গাজী মিয়া বোস্তানি। তিনি সমসাময়িক সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। তিনি ১৯১২ সালে মারা যান।
বিষাদ-সিন্ধু হল মীর মশাররফ হোসেন রচিত একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ও প্রাচীনতম উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। হিজরি ৬১ সালে সংঘটিত কারবালার যুদ্ধ ও এর পূর্বাপর ঘটনাবলী এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। এটি যথাক্রমে ১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ সালে তিন ভাগে প্রকাশিত হয়; পরবর্তীতে সেগুলি একখন্ডে মুদ্রিত হয় ১৮৯১সালে।
কাহিনীসংক্ষেপ
বিষাদ-সিন্ধুর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘটনাসমূহ। অবশ্য ইমাম হোসেনের মৃত্যুর ফলে যে সকল ঘটনা ঘটেছিল তারও বর্ণনা রয়েছে এ গ্রন্থে। বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলির সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায়, কিন্তু কোনো কোনো অপ্রধান চরিত্রের উল্লেখ বা সন্ধান ঐতিহাসিক কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। কিন্তু গবেষকের সিদ্ধান্ত- ‘যেহেতু ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সুতরাং এটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায়। এতে একই সঙ্গে উপন্যাসের চরিত্রচিত্রণ, মানবজীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি যেমন চিত্রিত হয়েছে তেমনি ইতিহাসের পটভূমিকায় সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, রক্তপাত, হত্যাকান্ড ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। ঐতিহাসিক উপন্যাস হলেও ইতিহাসের দিক থেকে এতে উল্লেখিত সকল ঘটনা নির্ভরযোগ্য নয়।
এটি কাব্যিক শৈলীতে রচিত এবং এতে অনেক নাটকীয় পর্ব রয়েছে। এসময় বাংলা উপন্যাস লেখার চল খুব বেশি ছিল না। মীর মশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য লেখকরা এসময় বাংলা উপন্যাসের ধারা সৃষ্টি করছিলেন। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী এই উপন্যাস সাধু ভাষায় লেখা হয়েছে। অনেক বাঙালি মুসলিম এই বইকে ধর্মীয় জ্ঞানে শ্রদ্ধা করে থাকেন, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
মূল চরিত্র
- হাসান ইবনে আলি - হুসাইনের বড় ভাই, মুহাম্মদ এর দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা আলি ইবনে আবি তালিব ও নবী কন্যা ফাতিমার পুত্র।
- হোসেন ইবনে আলি - হাসানের ছোট ভাই, মুহাম্মদ এর দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা আলি ইবনে আবি তালিব ও নবী কন্যা ফাতিমার পুত্র।
- এজিদ - মাবিয়ার পুত্র, হাসান ও হোসেনের প্রতিপক্ষ।
- সীমার - হোসেনের হত্যাকারী।
No comments