উপন্যাসঃকাঁটাতারে প্রজাপতি ।লেখক - (সেলিনা হোসেন) রিভিও

Image result for কাটাতারে প্রজাপতি
সেলিনা হোসেনের কাঁটাতারে প্রজাপতি নাচোলের তেভাগা আন্দোলন ও তাঁর কিংবদন্তিতুল্য সংগঠক ও নেত্রী ইলা মিত্রকে নিয়ে লেখা ইতিহাস-নির্ভর জীবনী উপন্যাস। 
এ উপন্যাসের কাহিনী নির্মাণ লেখিকার জন্য ছিল একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ জীবন ভিত্তিক উপন্যাসে লেখকের কল্পনাকে হতে হয় বাস্তবের অনুবর্তী, তাতে বাস্তবকে ছাপিয়ে ওঠা চলে না। ইলা মিত্র নিকট ইতিহাসের চরিত্র। তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকাকে শাণিত শিল্পরূপ দেয়া হয়েছে এই উপন্যাসে। ইতিহাসের কোনো বিশেষ সময় ও বিশেষ ঘটনার শৈল্পিক রূপায়ণ কীভাবে করা যায় তার বিশিষ্ট আলেখ্য এই উপন্যাস। উপন্যাসে বাস্তব রাজনৈতিক চরিত্রকে বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যেন তা মনগড়া কাহিনীতে পরিণত না হয়।

এ উপন্যাসটি লিখতে ঔপন্যাসিক সময় নিয়েছেন প্রায় আড়াই বছর (ডিসেম্বর ১৯৮৫ থেকে জুন ১৯৮৮)। বোঝা যায় উপন্যাসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপকরণ সংগ্রহ ও গবেষণায় তাঁকে যথেষ্ট সময় দিতে হয়েছে। উপন্যাসের রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ও ঐতিহাসিক চরিত্র রূপায়ণে ঔপন্যাসিক কেবল নিজের মমতাঋদ্ধ আবেগকে যুক্ত করেননি, ইতিহাস-নিষ্ঠার প্রতিও যথেষ্ট বিশ্বস্ত থেকেছেন।

কাঁটাতারে প্রজাপতি উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। তখনই তা পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরবর্তীকালে এর একাধিক পুনর্মুদ্রণ (২০০৩, ২০০৭) হয়। পরে কিছুটা পরিমার্জনাও করা হয়।

২৭টি অধ্যায়ে বর্ণিত এ উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে সুতো উৎপাদক আজমলের চিন্তাস্রোত বর্ণনা করে। আর কাহিনী শেষ হয়েছে রাজশাহী জেল হাসপাতালে মরণাপন্ন অবস্থায় থেকে আজমলের ইলা মিত্রের জবানবন্দি পাঠ ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ঘটনার মাধ্যমে। অর্থাৎ উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে কাল্পনিক ঘটনা দিয়ে আর শেষ হয়েছে বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে। কাহিনী বর্ণনায় ঔপন্যাসিক শক্তি ও কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। নাচোলের তেভাগা আন্দোলন দমনে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারের পুলিশের হিংস্রতা যে বর্বর রূপ নিয়েছিল তার বর্ণনায় লেখকের সেই গুণটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে। চরিত্রের মনোজাগতিক ভাবনা ফুটিয়ে তোলায়ও তাঁর বর্ণনা হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।

কাঁটাতারে প্রজাপতি উপন্যাসে কাহিনীর পরতে পরতে রয়েছে রাজনৈতিক ঘটনা ও পরিস্থিতির বুনোট। এ দিক থেকে এ উপন্যাসকে রাজনৈতিক উপন্যাসের সমগোত্র হিসাবে বিবেচনা করা চলে। কাহিনীর অন্যতম প্রধান চরিত্র জমিদার রমেন মিত্র ও তাঁর স্ত্রী ইলা মিত্র কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও সংগঠক। কৃষ্ণ গোবিন্দপুরে হাট সভায় বক্তৃতার জন্য ইলা মিত্র বক্তৃতার যে খসড়া তৈরি করে তাতে কৃষক আন্দোলনের রূপরেখা উঠে আসে। সেই সূত্রে উপন্যাসে বর্ণিত হয় ১৯২৯ সালের বিশ্বজোড়া মন্দা, ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব, জমিদারি প্রথার পতন মোকাবেলায় ভূমিসংস্কারের লক্ষ্যে ক্লাউড কমিশন গঠন, কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত প্রাদেশিক কৃষক সভা কর্তৃক জমিতে দখল স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ লাভের দাবি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের প্রস্তাব, ১৯৪০ সালে কমিশন কর্তৃক কৃষকদের দাবির অনুক‚লে রায় প্রদান, সে বছর জুনে যশোরে অনুষ্ঠিত কৃষক সভার চতুর্থ প্রাদেশিক সম্মেলনে তেভাগা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বাস্তব ঐতিহাসিক ঘটনা ও তথ্য।

তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে। মার্চ মাসে সারা ভারতে নির্বাচন, বাংলাদেশে মুসলিম লিগের বিজয়, সোহরাওয়ার্দীর প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ, মুসলিম লীগ কর্তৃক ১৬ আগস্টকে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণা, কলকাতায় দাঙ্গার তাণ্ডবলীলা, নোয়াখালীতে দাঙ্গার বিস্তার, দাঙ্গার পক্ষে মুসলিম লীগের ডানপন্থি অংশের মদদ, বামপন্থি অংশের ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান, দেশবিভাগের অনিবার্যতা, ১৯৪৮ সালের জুনের মধ্যে দেশ ছাড়ার জন্যে ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্রের জন্ম, দেশ বিভাগের প্রতিক্রিয়া, কৃষক সভা ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন, কমিউনিস্টদের ওপর মুসলিম লীগের দমন-পীড়ন, কলকাতায় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস, কংগ্রেসে রণদীভের সশস্ত্র সংগ্রামের নীতি অনুমোদন ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

উপন্যাসে কমিউনিস্ট ও কৃষক সভার রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার প্রসঙ্গও এসেছে। গুরু মাডাং, নিতাই ও শোয়েব সরকার শোষণের বিরুদ্ধে যে গান বাঁধে তার ভেতর দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারিত হয়। রমেন মিত্র, ইলা মিত্র, সাঁওতাল সর্দার মাতলা প্রমুখ কমিউনিস্ট পার্টির কাজে মেতে থাকে। মুসলিম লীগ সরকারের দমন-পীড়নের মুখে তারা আত্মগোপনে থেকে কাজ চালিয়ে যায়, ক্যাম্প স্থাপন করে সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এভাবে উপন্যাসে নানা রাজনৈতিক ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুনোট করায় উপন্যাসটি রাজনৈতিক উপন্যাসের চরিত্র পেয়েছে।

উপন্যাসে মূল কাহিনীকে ঘিরে কিছু উপকাহিনী গড়ে উঠেছে। নাচোল যাত্রার পথে আজমলের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে আজিজের মামা ছমির আলির উপাখ্যান। এটি অনেকটা প্রক্ষিপ্ত। তা উপন্যাসকে শিথিলবন্ধ করেছে। এ ছাড়াও মূল কাহিনীর পাশাপাশি স্থান পেয়েছে কয়েদ চাচা, কুতুব, ইয়াসিন বসনি, আছিয়া, আশিক আলী প্রমুখের প্রসঙ্গ। এসব উপকাহিনী সমকালীন সামাজিক জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ ফুটিয়ে তোলার জন্যে সহায়ক মনে হলেও এ সব কাল্পনিক ঘটনার অতিরিক্ত কিছুটা হলেও উপন্যাসের বুনোটকে সংহত করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়েছে।

আজমলের মৃত্যু দিয়ে শেষ হলেও এ উপন্যাসে শেষ পর্যন্ত কাজ করে অপরাজেয় সমষ্টিচেতনার বোধ। শত অত্যাচারেও ইলা মিত্র পরাজয় মানেন না। অনিমেষ লাহিড়ী, আজহার হোসেনও হার মানেনি। শাসকের সমস্ত বর্বরতাকে ছাপিয়ে উঠেছে মানুষের প্রতিরোধচেতনা, সহ্যশক্তি ও সংগ্রামী দৃঢ়তা। এভাবে শত নির্যাতন-দমন-পীড়ন সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মানুষের সংগ্রামী চেতনার জয় হবে- এই বোধটিই হয়ে ওঠে সমুন্নত। আর ব্যক্তিগত প্রত্যয় ছাপিয়ে গড়ে ওঠে সমষ্টিগত প্রত্যয়। এই প্রত্যয়ই শেষ পর্যন্ত প্রধান হয়ে উঠেছে উপন্যাসে।

ইলা মিত্রের জীবন অবলম্বনে উপন্যাস রচনা করতে গিয়ে লেখক কল্পনার আশ্রয় নিলেও ইলা মিত্রের জীবনের বাস্তব তথ্য এবং তেভাগা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকাকে যতটা সম্ভব যথযথভাবে অনুসরণ করেছেন। ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন চিত্রণে ইতিহাসের সত্যকে কোথাও লঙ্ঘন করা হয়নি। ঐতিহাসিক ঘটনাধারাকেও উপন্যাসে কালানুক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

উপন্যাসে পরিবেশ চিত্রণে প্রথম থেকেই লেখক সচেতন ছিলেন। নাচোল এলাকার রেশম চাষের জীবন বাস্তবতাকে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। জমিদার-জোতদারদের হাতে কৃষক ও ভাগচাষিদের শোষণের বৃত্তান্ত তিনি তুলে ধরেছেন। তবে কৃষক ও ভাগচাষিদের জীবনের খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তোলা হলে উপন্যাসটি আরও হৃদয়গ্রাহী হতো বলে মনে হয়। উপন্যাসে প্রসঙ্গক্রমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কুঠি স্থাপন, গৌড়ের ইতিহাস, বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগ, পাকিস্তানের অভ্যুদয়, কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সভার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় এসেছে। এর ফলে কাহিনী যথাযথ পটভূমিতে আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছে।

বিশেষ উল্লেখ্য কাহিনী বর্ণনায় লোকসাংস্কৃতিক উপাদানের সন্নিবেশ। এ উপন্যাসে কাহিনী বর্ণনায় লোকসংস্কৃতির নানা উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে কাহিনীকে আকর্ষণীয় ও পরিবেশ-অনুক‚ল করে তুলেছেন ঔপন্যাসিক। লঞ্চ ঘাটে নববধূবরণকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের ঢোল বাদন, সন্ধ্যায় সাঁওতালদের অনুষ্ঠানের আগে-পরে লোকজ আলকাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নানা কৌতুক করে কাইপ্যার আসর মাতিয়ে রাখা, দশম অধ্যায়ে সাঁওতালদের সূর্যপুজোর বর্ণনা, এই অধ্যায়েই মিসমিকে দিনমণির সাঁওতাল লোককাহিনী পিলচু হড়ম আর পিলচু বুড়ির গল্প শোনানো, নতুন রাষ্ট্রের জন্মোৎসবে সাঁওতালদের ঢোল বাদন ও শোয়েব সরকারের আলকাপ গানের আসর মাতিয়ে রাখা ইত্যাদি এর উদাহরণ।
৪.

আগেই বলা হয়েছে সেলিনা হোসেন কাঁটাতারে প্রজাপতি উপন্যাসে ইতিহাসের প্রতি যথাসম্ভব দায়বদ্ধ থেকেছেন। কল্পনাকে মেলাতে চেষ্টা করেছেন ইতিহাসের বাস্তবতার সঙ্গে। ফলে উপন্যাসে কাল্পনিক ও বাস্তব দুধরনের চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এ উপন্যাসে ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে অনেক বাস্তব চরিত্র। এদের মধ্যে প্রধান চরিত্র ইলা মিত্র। অন্যান্য বাস্তব চরিত্রের মধ্যে রমেন মিত্র, সাঁওতাল সর্দার মাতলা মাঝি, সাঁওতাল কর্মী হরেক, তফিজুদ্দিন দারোগা প্রমুখের চরিত্র স্বল্পরেখায় অঙ্কিত। উপন্যাসে এ ছাড়াও রয়েছে অনিমেষ লাহিড়ী, আজাহার হোসেন, ফণীভূষণ মাস্টার, ওয়াজেদ মোড়ল, বৃন্দাবন, ঝড়– কোচ, বিজু মাঝি, শোয়েব সরকার, ও সি রহমান, ডা আয়ুব আলী প্রমুখ বাস্তব চরিত্র।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় ও বাস্তবের জীবন্ত চরিত্র চরিত্র ইলা মিত্রকে উপন্যাসে ফুটিয়ে তোলায় ঔপন্যাসিক সফল হয়েছেন। উপন্যাসের প্রথম দিকেই তাঁকে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কলকাতার মেয়ে ইলা সেন ইলা মিত্র হয়ে আসছেন শ্বশুরবাড়ি। তাঁর স্বামী রমেন সেন কেবল জমিদার তনয় নয়, নাচোল অঞ্চলে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলনের প্রথম সারির রাজনৈতিক সংগঠক ও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। প্রথম দর্শনেই ইলা মিত্রকে মনে হয়েছে প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন : ‘শ্যামলা, ছিপছিপে লম্বা, জ্যামুক্ত ধনুকের মতো বাঁকিয়ে ছেড়ে দিলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।’ নানা তথ্য সন্নিবেশ করে ঔপন্যাসিক ইলা মিত্রের পরিচয় তুলে ধরেছেন পাঠকের কাছে। শীর্ণকায়া এই বাঙালি মেয়ে ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত ছিলেন প্রথম সারির ক্রীড়াবিদ। ভারতের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের রেকর্ড ভেঙে বিখ্যাত হয়েছেন। ১৯৪৩ সালে বি এ ক্লাসের ছাত্রী থাকাকালে কলকাতায় মহিলা আত্মরক্ষা কমিটির সদস্য হয়েছেন। একই বছর হয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।

উপন্যাসে এই চরিত্রকে লেখক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতে সহজেই ধরা পড়ে, নিছক গৃহবধূ হিসেবে জমিদার বাড়িতে ইলা মিত্রের আগমন হয়নি, তিনি এসেছেন স্বামীর উপযুক্ত সঙ্গী ও সহযোদ্ধা হিসেবে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও শোষণমুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে। কলকাতার শহুরে মুক্তজীবনে বেড়ে ওঠা মেয়ের পক্ষে গ্রামের রক্ষণশীল পরিবেশে মানিয়ে চলা ছিল কঠিন কাজ। কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকায় ইলা মিত্র সহজেই তাতে সফল হন। জমিদার বাড়ির প্রথাবদ্ধ সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা মেনে নিয়ে ক্রমেই রক্ষণশীলতাকে পেরিয়ে যান তিনি। নেমে পড়েন নারী শিক্ষা বিস্তারের কাজে। বাড়ি বাড়ি ছোটেন মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে। সমাজের রক্ষণশীল অংশ থেকে নারী শিক্ষার পথে বাধা তৈরি হলে তিনি দৃঢ় পদক্ষেপ নেন তার মোকাবেলায়। স্কুলের চত্বরে আয়োজন করেন মুক্তাঙ্গন বিতর্ক প্রতিযোগিতার।

কেবল মেয়েদের স্কুল পরিচালনা নয় একই সঙ্গে ইলা মিত্র যুক্ত হন কৃষক সভা ও কমিউনিস্ট পার্টির কাজে। ছুটির দিনে গ্রামে গ্রামে যেতে শুরু করেন কৃষকদের সংগঠিত করতে। বৈঠকে সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। ক্যাম্পে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেন। পুলিশি তৎপরতার মুখে আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। এরই মধ্যে তাঁর ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু তেভাগা আন্দোলন জোরদার হতে থাকলে আন্দোলনের প্রয়োজনে সন্তানকে ছেড়ে সাঁওতালদের মধ্যে কাজ করতে থাকেন। তিনি হয়ে ওঠেন সবার রানীমা। পুলিশের দমন নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ইলা মিত্র প্রীতিলতার মতো আত্মত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। অভিযান চলে তাঁকে জীবিত কিংবা মৃত ধরার জন্যে। কিন্তু ইলা মিত্র সংগ্রামে থাকেন অবিচল। অসম শক্তি নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। সাঁওতাল সহযোদ্ধা ও সঙ্গীরা তাঁকে বুক দিয়ে আগলে রাখে। কিন্তু ঘটনাচক্রে রোহনপুর স্টেশনে পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়েন। এরপর তাঁর ওপর চালানো হয় বর্বর ও নৃশংস অত্যাচার। কিন্তু মধ্যযুগীয় সে বর্বরতা হার মানে ইলা মিত্রের মানসিক দৃঢ়তার কাছে।

রাজনৈতিক চরিত্র হলেও ব্যক্তিমানুষ ইলা মিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে ঔপন্যাসিক ভুলে যান নি। ইলা মিত্রের স্বামীপ্রেম, সন্তান-বাৎসল্য, অতিথিপরায়ণতা ইত্যাদিও স্বল্পরেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন ঔপন্যাসিক। ফলে চরিত্রটি রাজনৈতিক সংগ্রামী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেও রক্তমাংসের জীবন্ত মানুষ হয়ে উঠেছে।

রমেন মিত্র বাস্তব জীবন থেকে নেয়া ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক চরিত্র। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠক এবং ইলা মিত্রের স্বামী। উপন্যাসে রমেন মিত্রের চরিত্র ততটা ঔজ্জ্বল্য পায়নি। ইলা মিত্রের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্যে অন্যান্য সহায়ক চরিত্রের মতোই এটি স্বল্পরেখায় চিত্রিত হয়েছে। জমিদার তনয় হলেও কৃষকদের অধিকার আদায়ের পক্ষে রমেন মিত্রের অবস্থান দৃঢ়। তিনি ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ। কথা বলেন থেমে থেমে। কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠক হিসেবে গোপনে পার্টির কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করেন। তেভাগা আন্দোলনে সংগঠকের ভূমিকা পালন করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। আত্মগোপনে থেকে আন্দোলন-সংগঠনে সক্রিয় থাকেন তিনি।

মাতলা মাঝি চণ্ডীপুরের সাঁওতালদের অবিসংবাদিত নেতা। তার পেছনে রয়েছে সাঁওতালদের ব্যাপক সমর্থন। তার ডাকে যে-কোনো সময়ে সব সাঁওতাল বেরিয়ে আসে। সে চাপা স্বভাবের লোক। বয়োজ্যেষ্ঠ। কালো পেটানো শরীর। সে কেবল প্রচণ্ড সাহসী নয়, জোতদারদের বিরুদ্ধে সেই সবচেয়ে সোচ্চার।

মাতলা চাষবাস করে। পাশাপাশি পার্টির কাজ। সে ভালো বক্তৃতা করে। ঘরোয়া সভা করে। পায়ে গোদ হয়েছে। ব্যথায় কষ্ট পায়। হাঁটতে কষ্ট হয়। ভেষজ ওষুধ লাগায়। তবু পার্টির কাজের নেশায় সে আচ্ছন্ন। কর্মতৎপরতার গুণে সে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পায়। তার বাড়িতে একটা ক্যাম্প করা হয়। সেখানে ছেলেদের তীরধনুক ও বর্শা চালানো শেখানো, পুলিশি তৎপরতার মুখে নিজেদের বাঁচানো, আত্মগোপনে থাকা ইত্যাদি শেখানো হয়। তার তৎপরতায় কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। সাঁওতালদের মধ্যে আন্দোলনের প্রাণ সঞ্চার করে সে। তেভাগা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তার বিরুদ্ধেও হুলিয়া জারি হয়।

হরেক সাঁওতালদের আর এক কর্মী। হরেকের বাবা-মা বর্গা চাষি। হরেক বাবা-মার একমাত্র ছেলে। সে জোয়ান মরদ। যেন পাথরে গড়া ছেলে। অত্যন্ত সাহসী। প্রচুর খাটতে পারে। তার শরীর আর মনের জোর একই সমান্তরালে। শিকারেও সে ওস্তাদ। পাখি শিকার করে ঝলসে খেতে তার দারুণ আনন্দ। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর হরেকের ওপর অকথ্য নির্যাতন চলে। কিন্তু হরেক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও তার কাছ থেকে ইলা মিত্রর বিরুদ্ধে কোনো কথা আদায় করতে পারেনি পুলিশ।
কাঁটাতারে প্রজাপতি উপন্যাসে অসংখ্য কাল্পনিক চরিত্র ভিড় করেছে। এসব চরিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : সুতো ব্যবসায়ী ইয়াসিন বসনি, ইয়াসিন বসনির ছেলে আজমল, আজমলের মামা জোতদার নাসির আলী, মামাতো ভাই আজিজ, কুতুব, বৃদ্ধ ছমির আলি, আশিক আলি, আছিয়া প্রমুখ। এ ছাড়াও রয়েছে ছমির আলির ছেলে রতন, পুত্রবধূ তারাবানু, তমেজ মিয়া, তার মেয়ে সবুরন, শিবদাস, সুখিয়া, সুচন্দ, দিনমণি, কাজল প্রমুখ।

উপন্যাসে কাল্পনিক চরিত্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রেশম চাষী ও ব্যবসায়ী ইয়াসিন বসনি। সে আজমলের বাবা। এলাকার সবচেয়ে বড়ো রেশম চাষি। সবচেয়ে ভালো গুটি হয় তার ঘরে। চমৎকার সুতো তৈরি হয়। প্রচুর সুতো যায় মুর্শিদাবাদে। সে জোতদার না হলেও তার আচার-আচরণ জোতদারের মতো। সে অর্থলোলুপ। একাধিক বিয়ের পরও বিধবা আছিয়ার সঙ্গে তার অবৈধ গোপন সম্পর্ক। পরিবারে তার ভূমিকা একনায়কসুলভ। সব ব্যাপারে সে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। কন্যা জোহরার মতের বিরুদ্ধে তাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। কুতুব ও জোহরার ভালোবাসা তার কাছে বিছুটির জ্বালা। রক্ষিতা আছিয়াকে সে দাবড়ে রাখে, মাথা তুলতে দেয় না। আছিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক হৃদয় দিয়ে ভালোবাসার নয়, ভোগের অধিকারেই সে সন্তুষ্ট। পুত্র আজমলের ওপর সে অসন্তুষ্ট। তাকে সে এড়িয়ে চলে। ক্ষিপ্ত উন্মাদ কুতুবের দায়ের কোপে তার মৃত্যু হয়। চরিত্রটি সরাসরি তেভাগা আন্দোলনের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় সক্রিয় হয়নি। মূল কাহিনীস্রোতে এর সরাসরি কোনো সম্পর্কও নেই। উপকাহিনীর বিস্তারের মধ্যেই মুখ্যত এর সার্থকতা।

উপন্যাসে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় চরিত্র আজমল। উপন্যাসে কাহিনীর সূত্রপাত হয়েছে এই চরিত্রের মাধ্যমে। আজমল জন্মকালেই মাতৃহীন। বারো বছর পর্যন্ত মামা বাড়িতে বড় হয়েছে সে। পড়াশোনা ম্যাট্রিক পর্যন্ত। বাবা ইয়াসিন বসনি ওকে জোর করে রেশম ব্যবসায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আজমল রেশমের চাষ বোঝে। চমৎকার গুটি বানায়। চকচকে সুতো তোলে। বাবাকে সে পছন্দ করে না। তার দর্শন ভিন্ন। সে ভিন্নভাবে বাঁচতে চায়। মামাতো ভাই আজিজের প্রভাবে সে তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত হয়। কিন্তু সে বুঝতে পারে আজিজের সঙ্গে তার নিজের বড় ব্যবধান। বড়ো কিছু করার তার সাধ্য নেই। বাবার অবৈধ সম্পর্কময় জগাখিচুড়ি জীবনযাপনের বিরুদ্ধে তার প্রবল ঘৃণা। বাবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোহরাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়ায় আজমল বাবার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত। সে মাঝে মাঝে নাচোলে পালিয়ে যাওয়ার কথা যাবে। কিন্তু ছোট মামার পরামর্শে সে তাতে নিরস্ত হয়। কারণ বাবার অত সম্পত্তি থেকে সে বঞ্চিত হবে। তবে বাবার সঙ্গে ঝগড়া হলে সে বাড়ি ছেড়ে পলু ঘরে গিয়ে ওঠে। তেভাগা আন্দোলন সমর্থন করে সে পুলিশের অত্যাচারের শিকার হয়। পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে সে ইলা মিত্রের জবানবন্দি পড়ার সুযোগ পায়।

উপন্যাসে তেভাগা আন্দোলনের প্রতিপক্ষ চরিত্র হিসেবে দেখা যায় নাসির আলি জোতদারকে। ইলা মিত্র মেয়েদের স্কুল পরিচালনা শুরু করলে তার বিরুদ্ধে নাসির জোতদারকে বিশেষ তৎপর হতে দেখা যায়। তার ছেলে আজিজ তেভাগা আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক। উপন্যাসে নাসির আলির চরিত্রটি বিশদভাবে চিত্রিত হয়নি। বাইশ অধ্যায়ে তাকে দেখা যায় ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে থানায় এসে তেভাগা আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ হত্যার অতিরঞ্জিত বর্ণনা দিতে। তার সঙ্গে আসে জোতদার মাহবুব হোসেন। কিন্তু উপন্যাসে এই চরিত্রটিও নির্মিত হয়নি। চৌদ্দ অধ্যায়ে সাধারণভাবে জোতদারদের শোষণের স্বরূপ বর্ণনা করা হলেও উপন্যাসে কোনো জোতদারের অত্যাচার বা নিষ্ঠুরতার কোনো চিত্র পাওয়া যায় না।

নাসির জোতদারের ছেলে আজিজ আজমলের মামাতো ভাই। সে মালদহ কলেজের ¯œাতক এবং তেভাগা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। কমিউনিস্ট নেতা রমেন মিত্রের একনিষ্ঠ অনুসারী। আজিজ রোগা পাতলা হলেও দারুণ কাজের। অসুখবিসুখ নেই। ক্লান্তিতে কাবু হয় না। দীর্ঘ পথ পায়ে হাঁটতে পারে। রাত জেগে গল্প করতে পারে। সংসারে তার বাঁধন নেই। জোতদার বাবাকে ছেড়ে সে ওয়াজেদ মোড়লের বাড়িতে ওঠে। দুজনে একসঙ্গে জোতদার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়। তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে সে আত্মগোপন করে আন্দোলনে অংশ নেয়।

কুতুব আছিয়ার চাচাতো বোনের ছেলে। কুতুবকে নিয়ে মা বিধবা হলে সে আছিয়ার বাড়িতে উঠেছিল। সে টুকটাক কাজ করত। না হয় উপোস করত। মুন্সীর গম্ভীরার দলে ছিল। চমৎকার গাইতে পারত। ইয়াসিন বসনির মেয়ে জোহরাকে সে ভালোবাসত। কিন্তু তাকে বিয়ে করার সামাজিক অবস্থান ওর ছিল না। তাই জোহরাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়। জোহরার বিয়ের পর কুতুব গান ছেড়ে দেয়। বিষণœতায় আচ্ছন্ন হয়। আত্মপীড়ন শুরু করে। ক্রমেই সে অত্যন্ত রাগী ও কর্কশ স্বভাবের হয়ে ওঠে। তারপর একসময় পাগল হয়ে যায়। পাগলামির এক পর্যায়ে সে ইয়াসিন বসনির ঘাড়ে কোপ বসিয়ে দিয়ে তাকে খুন করে।

ছমির আলি সম্পর্কে আজিজের মামা। বয়স পঁচাত্তর। প্রাণ খুলে হাসা তার স্বভাব। তাঁর জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা। বুক উজাড় করে সবিস্তারে বলতে পারে জীবনের নানা ঘটনা। বোঝা যায় তাঁর স্মৃতিশক্তি প্রখর। ছেলে রতনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো না। রতনের বৌ তারাবানু দজ্জাল মেয়ে। সম্পত্তির আশায় সে শ্বশুরের মৃত্যু কামনা কর। ছমির আলি সাড়ম্বরে ৬০তম বিয়ে বার্ষিকীর উৎসব পালন করে। উৎসব শেষে রাতে আজমলের কাছে তার তরুণ বয়সের প্রেমের স্মৃতি রোমন্থন করে।

উপন্যাসের আর একটি কাল্পনিক চরিত্র আশিক আলি। তার বয়স ছত্রিশ। স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো। অভাব নেই প্রাচুর্যও নেই। প্রথম স্ত্রী জরিমন সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়। তার দুবছর পর রাবেয়া ওর ঘরে আসে। পাঁচ বছরেও রাবেয়ার সন্তান হয়নি। সে তোরাব মিয়ার সঙ্গে পলিয়ে যায়। এরপর ও পেয়েছে করিম শেখের সুন্দরী মেয়ে সাহারাকে। সাহারা একরোখা জেদি মেয়ে। তার অন্যত্র ভালোবাসা ছিল। বিয়ের রাতে সে তাকে ছুঁতেও দেয়নি। সে একদিন কাসেমের কাছে চলে যায়।

উপন্যাসে কাল্পনিক চরিত্র আছিয়া অনেকটা গুরুত্ব পেয়েছে। আছিয়ার বাবার দাদার দাদা মস্ত বড় বসনি ছিল। সে জমিরুদ্দিনের চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী। জমিরুদ্দিনের মৃত্যুর পর আছিয়া তার সব সম্পত্তি পেয়ে যায়। তখন তার বয়স চল্লিশ। আছিয়া শক্ত মেয়ে মানুষ। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরে। চমৎকার ব্যবসা চালায়। আছিয়ার ব্যবসা এন্ডির চাদরের জন্যে মুগা সুতো তোলা। সে নিজের হাতে রেড়ির তেল তৈরি করে। সুতা কাটুনি মেয়েদের কাজ তদারক করে। আছিয়া তেভাগার বিরুদ্ধে। তার মতে, জমি যার ফসল তার। কুতুবের জন্য তার সহানুভূতি অপরিসীম।
এ উপন্যাস রচনার মাধ্যমে সেলিনা হোসেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন দেশের বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসের পাতা থেকে একজন সংগ্রামী নারীর জীবনকে কথাসাহিত্যে রূপায়িত করার মহৎ শৈল্পিক দায়িত্ব। ইতিহাসের পাতায় জীবনের শিল্পরূপ রচনা করায় সার্থক হয়েছেন তিনি। শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও আত্মদানের গৌরবগাথাকে সাহিত্যে রূপায়িত করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার মহৎ প্রয়াস কাঁটাতারে প্রজাপতি। এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে স্মরণীয় ও অভিনন্দনযোগ্য।

No comments

Powered by Blogger.